ফুল, পুষ্প, কুসুম- যে নামেই আখ্যায়িত হোক, এই শব্দনিচয়ের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ কথিত "সুন্দরের লীলা রঙে রঙে তরঙ্গিত আর গভীরতলে 'শান্তম্ শিবম্ অদ্বৈতম্'। 'এতস্যৈবানন্দস্য মাত্রাপি' দেখি ফুলে ফুলে পল্লবে; তাতেই মুক্তির স্বাদ পাই, বিশ্বব্যাপী প্রাণের সঙ্গে প্রাণের নির্মল অবাধ মিলনের বাণী শুনি।" মনুষ্যপ্রজাতির গোড়া থেকে আজতক সর্বত্র জীবনের প্রতিটি যোগে-আনন্দ, বিষাদ, জন্ম, মৃত্যু- যাবতীয় আচার থেকে শুরু করে ব্যবহারিক ভেষজ চিকিৎসায়ও ফুলের ভূমিকা ও কার্যকারিতা ব্যাপক- বহুধা বিস্তৃত। বর্ণে- গন্ধে-রঙে-শোভনে-সৌরভে বিশ্ব-চরাচরে সৃষ্টির এই অতুলন উপাচারের বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য ও প্রকারভেদ। বাংলা সাহিত্য পুষ্পাঞ্জলিতে আকীর্ণ। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণের টেক্সট- এ আমরা দেশীয় ফুলের হাল-হকিকত অবগত হলেও, সাইয়িদ মাহমুদ তসলিমের এই মৌলিক গবেষণা ও সুলুকসন্ধান প্রতীচ্যের পুষ্পমঞ্জরীর এক অনালোকিত অধ্যায়ের সনিষ্ঠ অন্বেষা। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর সচেতনতায় একটি ক্ষুদ্র তৃণ থেকে শুরু করে, সুউচ্চ কুসুম-শোভা বয়ান অত্র গ্রন্থ। তিনি বিদেশি পুষ্পসম্ভার উন্মোচন করেছেন কখনো প্রেমিকের চোখে, কখনো আবার প্রকৃতিপ্রেমিকের মায়ায়, ভালোবাসায়; আবার কখনো একজন গবেষকের অনুসন্ধিৎসায়। বস্তুত, সাইয়িদ মাহমুদ তসলিম-এর বহুস্তর ভাবনা ও অনুভবগুলোর চয়নিকা এই গ্রন্থ। 'অরণ্য উদ্ভিদ ॥ বিদেশি ফুল' নিশ্চয়ই আগ্রহী পাঠক ও উদ্ভিদতত্ত্ববিদদেরও একটি আকর গ্রন্থ।