জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন দূরদর্শী ও শিক্ষা সচেতন নেতা। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা, স্বদেশপ্রেম, মানবতাবোধ ও শিক্ষাদর্শন ছিল অভূতপূর্ব, অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয়। গহিন অন্ধকারের গহ্বরে নিমজ্জিত ও পরাধীনতার শিকলে বন্দি বাংলাদেশকে তিনি মুক্ত করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বাঙালি জাতি আজ স্বাধীনতার সংস্পর্শে উদ্ভাসিত এবং বিশ্ব-দরবারে আজ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কেবল বঙ্গবন্ধুর একক বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণেই। তাঁর অনবদ্য নেতৃত্বগুণ ও নিরলস-ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই তা বঙ্গবন্ধু শুরুতেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাঁর মেধা-মননে, চিন্তা-চেতনায় এবং সদা-সর্বদায় বাঙালি জাতিকে নিয়ে ভাবতেন কীভাবে বাঙালি জাতিকে একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করা যায়। স্বাধীনতা-উত্তর ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈষম্যহীন ও যুগোপযোগী করার জন্য কাজ করেছেন। শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে সংবিধানে সরকারিকরণ ও বাধ্যতামূলক করেছেন। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনীতিক নন; তিনি ছিলেন একটি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সে স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী। তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি, রাজনীতির জীবন্ত পাঠশালা। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি দেশকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা-দীক্ষায় স্বাবলম্বী করার জন্য তিনি যুগান্তকারী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে প্রতিরক্ষার চেয়ে শিক্ষা খাতে বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তৃতা ও লেখালেখি থেকে তাঁর শিক্ষাদর্শন ও ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু আরো কিছু দিন বেঁচে থাকলে তাঁর জীবদ্দশায় বাঙালি জাতি বিশ্বের অন্যতম শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতে পারতো। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির এ স্বপ্ন অধরা রয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময়, জাতির পিতাকে সপরিবারে বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণিত, বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তার গতিপথ থেকে বিচ্যুত করা হয়। অবশেষে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আবারও তার কাক্সিক্ষত গতিপথ খুঁজে পায়। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব-দরবারে একটি রোল মডেল ও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশ আজ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। এগিয়ে যাচ্ছে আমার সোনার বাংলাদেশ; এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। মো. রিয়াদ খান