পাঠ এবং অর্থের মধ্যে যখন একটি সম্পর্ক সুস্পষ্ট, ভাব-ভাবনা-কল্পনার রঙ অর্থপূর্ণ নিজস্ব জগত নির্মাণে যখন পরিমিত বোধে সৃষ্টিশীল, তখন সে রচনা হয়ে ওঠে সমাজ- সভ্যতা-জীবন অনুভবের বিমূর্ত ও তরল যুগপৎ প্রতিসরণ। কবিতার অন্তর্নিহিত বার্তা তখনই আমাদের বোধে ও মননে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নানা ছন্দে বর্ণে বর্ণনায় চিত্রিত হতে থাকে জীবনেরই বিচিত্র ছাপচিত্রে। সেলিনা শিরীনের কবিতা নানা বার্তায় ব্যাঞ্জনাময় । তাঁর কবিতা পড়তে পড়তেই পাঠকের মনে কবিতার অর্ন্তনিহিত বার্তার পরিস্ফুটন ঘটে। এ গ্রন্থে সংকলিত কবিতাগুলো কেবলমাত্র বার্তাপূর্ণ নয়, সাথে দার্শনিক মূল্য সম্পন্নও। সেলিনা শিরীন শিকদার স্বতঃস্ফূর্ত তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি মেলে দেখেন তাঁর পারিপার্শ্বিক জীবন। একই সাথে তিনি পর্যবেক্ষণ করেন তাঁর আপন অনুভূতির গতিপ্রকৃতি। এই দেখার ক্ষমতা তাঁর রচনাকে করে তোলে বৈশিষ্টমন্ডিত। তাঁর লেখা উপলদ্ধির গভীরে যখন মনোযোগ টেনে নিয়ে যায়, তখন পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সবকিছুই বিনির্মাণ নয়, কারো কারো লেখায় আবিস্কারও রয়েছে। অগ্রজ কবিবৃন্দ যা লিখেন নি, তা নতুন কবিরা লেখেন। তাঁর কবিতায় বিষয়বস্তুর তালিকায় সেই নতুন সংযোজন দেখা যাচ্ছে। পরিলক্ষিত হচ্ছে দর্শন, উপলব্ধি, এবং আবিষ্কারের মধ্যে সময়ের ভেদ। এ বইয়ের কবিতাগুলো কবির পূর্ববর্তী কবিতার বই থেকেও ভিন্ন। তাঁর কবিতায় যেমন মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলি ও অভিজ্ঞতা- অভিজ্ঞানের পরিস্ফুটন লক্ষণীয়, তেমনি সমাজ-বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চেতনায় যাবতীয় দুর্যোগ অতিমারি মরকের মাঝেও জীবনমুখিতার চিত্রণ প্রয়াসও প্রশংসনীয়। সর্বত্র অর্থ স্থির নয় বরং প্রতিনিয়ত শব্দের ব্যবহারে অর্থ পরিবর্তনের ভেতরে ক্রমাগত বিকশিত। সময় এবং স্থান ভেদে তা পরিবর্তিতও হয়। প্রেম, প্রকৃতি, সমাজ-সংস্কৃতি, লোকজ, আদিবাস ও অভিবাসনের উপকরণ, অনুসঙ্গ আর ঐতিহ্যের ব্যবহারের নিজস্ব শৈলী তাঁর কবিতাকে মানবিক উচ্চতায় অর্থপূর্ণ এক মাত্রা দিয়েছে। সেলিনার রচনার এই বৈশিষ্টসমূহ এবং হৃদয়গ্রাহী আবহ তাঁর কবিতাকে পাঠকপ্রিয়তা দেবে বলে আমরা আশা করি।
রূপকথা গল্পকার, কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। পেশাদার জীবনে তিনি একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পেশাজীবী ও নিবেদিত প্রাণ মনোবিজ্ঞানী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন আজিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বেগম বদরুননেসা মহিলা মহাবিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি থেকে।