মহিলা বেশ গুছিয়ে কথা বলতে জানেন। মনে হল তিনি উচ্চ শিক্ষিত। দেখতেও বেশ সুশ্রী। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রহিমের স্ত্রীকে মিলিটারি ধরে নেয়ার পর তার অবস্থা কী হয়েছিল? তিনি কি এখন এ বাড়িতে আছেন? মহিলা বলেন, না, সে বেঁচে নেই। কয়েক বছর আগে মারা গেছে। আমি কখনো তাকে দেখিনি। শুনেছি পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে সে কয়েকমাস বন্দি ছিল। ছাড়া পাওয়ার পর রহিমের কাছে এসেছিল। কিন্তু রহিম তাকে গ্রহণ করেনি। এ অবস্থ্য় সে তার বাবার কাছে চলে যায়। বাকি জীবন বাবার বাড়িতেই ছিল। এদিকে আর কখনো আসেনি। আসবে কার কাছে? স্বামীর ঘরে তো তার জায়গা হলো না। রহিম আবার বিয়ে করেছে। সে ঘরে ছেলে-মেয়ে হয়েছে। ছেলে-মেয়েরাও বিয়ে-শাদী করেছে। মহিলার কথা শেষ হয় না। তিনি বলেই যাচ্ছেন। তিনি বলেন, রহিমের উচিত ছিল তার বৌকে ঘরে নেয়া। তাকে ফিরিয়ে দেয়াটা অমানবিক হয়েছে। এ মহিলার তো কোনো দোষ ছিল না। দোষ তার কপালের। কপাল দোষে মিলিটারির হাতে ধরা পড়ে সে বীরাঙ্গনা হয়েছিল। যুদ্ধের সময়ে এ দেশের হাজার হাজার নারী তার মতো বীরাঙ্গনা হয়েছে। বেশির ভাগ মেয়ের জীবনেই স্বামীর সংসার জোটেনি। একটা অভিশপ্ত জীবন নিয়ে তারা বেঁচে আছে। অনেকে তো মারাই গেছে। রাষ্ট্রের কিন্তু উচিত ছিল এ মেয়েদের দায়িত্ব নেয়া। তিনি বলেন, সম্ভব হলে আমার এ কথাগুলো আপনার বইয়ে লিখবেন।