ছোটবেলা থেকেই আমার ভালো খাবারের প্রতি আগ্রহ ছিল ভুল জীবন থেকেই ছোটখাটো রান্নার হাতে খড়ি। ভুল থেকে ফিরে এসে পছন্দের কিছু বানিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে বা অভ্যাস তখন থেকেই। কোনদিন হালুয়া, কোনদিন ডিমভাজি পরোটা ইত্যাদি বানানো অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছিল। পরবর্তীতে ঢাকায় পড়তে আসবার পর কিছুদিন এর ভাটা পরেছিল। কারন হোষ্টেল জীবনে থাকা খাওয়ার জন্য, অতিরিক্ত পড়ার চাপ এবং ছাত্র-রাজনীতিতে স্বক্রীয়ভাবে অংশ গ্রহন করার। কারনে অন্যকিছু চিন্তা করার অবকাশই ছিল না। সুদূর মেলবোর্নে পাড়ি দেয়ার পর অবিবাহিত জীবন কাটাবার সময় এবং মেলবোর্নে অল্প-সংখ্যক বাংলাদেশী ছিল বলে নূতন করে আবার দেশী খাবার রান্না করার চর্চা'র বিকল্প ছিল না। সে সময় আস্তে আস্তে বিভিন্ন রকম খাবার তৈরী করার ইচ্ছা ও প্রয়োজনে নূতন করে নিজের রান্না'র আগ্রহটা আবার তৈরী হ'লো । নিজের অজান্তেই শুরু হলো - বিরিয়ানী, মুরগীর রেজালা, মাছভাজি, পরোটা ইত্যাদি ইত্যাদি। ভোজন রসিক ব'লে কথা বিবাহীত জীবনে পা দেয়ার পরে প্রায় দুই দশক আমার রান্নায় ভাটা পরেছিল। গিন্নী'র সুন্দর সুন্দর সুস্বাদু রান্নার সাথে পাল্লা দেয়ার কথা কখনও মনে হয়নি। গত দশবছর ধরে আবার নূতন করে। রান্নায় পদার্পন - সব সময় মনে হতো গিন্নীর সাথে একটু হাত লাগাই। দু একটা রান্নার পদ যোগ করি। তখন থেকেই রান্নার স্পৃহাটা পুনরজ্জিবিত হতে শুরু করলো। প্রথমে রবিবারের ইলিশমা ভাজি, ফাজিলের ঘাটের মাছের ভর্তা (চাসনি)। আবার আরেকদিন হয়তো ডিমের কোর্মা অথবা শুটকি দিয়ে পুঁইশাক বা কাঁঠালের ইচড় ইত্যাদি। আমাদের পুত্রবধু ভেনাসা ও মেয়েজামাই রয়ে'র আগ্রহ দেখে এই রান্নাগুলোতে আরও অনুপ্রানিত হতাম। ওরা দু'জনেই বাংগালী না হওয়া সত্ত্বেও ইলিশ মাছ ভাজা আর ফাজিলের ঘাটের চাসনি ওদের খুউব পছন্দের। গত দু বছরে কভিডের কারনে ঘরে বসে আরও নুতন ধরনের খাবার তৈরীর আগ্রহ শুরু হলো আমার পৃথিবীর বেশ কিছু line-dining রেস্তোরায় খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখান থেকে আমার নূতন করে দেশী খাবার ও অন্যান্য খাবার কে অন্য মাত্রায় নেয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু হলো। যেমন আমার গ্রামের খাবার, প্রচলিত বাংলাদেশী খাবার, ইটালীয়ান খাবার, ফরাসী খাবার, মধ্যপ্রাচ্যের খাবার, ভারতীয় খাবার কে অন্য মাত্রায় এগিয়ে নেয়ার । এই রন্ধন প্রণালীর নামকরনের পেছনে একটা বিশেষ কারন রয়েছে। সম্প্রতি আমার জন্মদিনে আমার মেয়ে রান্নার কিছু সরনজাম (utensils) দিয়েছিল- ছুরি, এ্যাপ্রন, কিচেন গাবস্ ইত্যাদি । আমার নজর কেড়েছিল রান্নার জন্য ব্যাবহারের ডুরিটা। তাতে লেখা ছিল 'Banada' - 'বানাদা' অর্থাৎ, বাবা নানা ও দাদা। এটাই 'বানাদা'র কিচেন অথবা বাংলায় বানাদা'র রসুই ঘরের অনুপ্রেরনা ।