একজন অধ্যাপক থেকে দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ। প্রত্যক্ষ রাজনীতির ৪৪ বছর দেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাসের তিনি একান প্রত্যক্ষদর্শী এবং জীবন্ত কিংবদন্তি নেতা। ছাত্র জীবনে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ গ্রন্থের কলেবরের কথা বিবেচনা করে ছাত্র-রাজনীতিতে তাঁর কর্মকান্ডের বিষয় গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়নি। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে লন্ডনে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ওই সময় 'যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একজন আহ্বায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে তিনি বিরোচিত ভূমিকা রেখেছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্মানিত করেছেন। লেখক ড. মোশাররফ ১৯৭৯ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং ১৯৯৪ থেকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। লেখক ড. মোশাররফ ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, ১৯৯৬ সালে স্বল্পকালীন মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেখক তাঁর ৪৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সরকারি দল ও বিরোধী দলে অবস্থানকালে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার কারাবরণ এবং বহু মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় নির্যাতিত হয়েছেন। বাংলাদেশের ৪৪ বছরের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য ঘটনার অংশীদার ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লেখকের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও পর্যবেক্ষণ এ গ্রন্থে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেমায় যোগদান করেন। একই বছর ‘কলম্বো প্লান স্কলারশীপ’ লাভ করে উচ্চ শিক্সার জন্য লন্ডন গমন করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৭০ সালে এমএসসি, ১৯৭৩ সালে ডিআইসি এবং ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ১৯৭৫ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক এবং ১৯৮৭-১৯৯০ মেয়াদে ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শিক্ষাজীবনে ছাত্র-রাজনীতিতে সত্রিয় ছিলেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত এজিএস এবং হাজী মোহাম্মদ হমসিন হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বয়াক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে এবং তাঁর আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন এবং অদ্যাবধি এই পদে বহাল আছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জেনেভায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালে ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকার জন্য ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনে তাঁকে `World No Tobacco Award’ এ ভূষিত করা হয়। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশ ও বিদেশের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভূতত্ত্ব ভিষয়ে তাঁর একটি মৌলিক উদ্ভাবন `Hossain’s Method of Extension’ নামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।