নিজের বাবার পরিচয় জানাটা যেমন জরুরি, তেমন জরুরী নিজ জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে জানা। নিজ জাতির ইতিহাসের সাথে মিশে থাকে, আপন রক্তের ঘ্রাণ, নাড়ীর টান। নিজের রক্ত ও নাড়ীর সম্পর্কে, নিজের শেকড় সম্পর্কে উদাসীন থাকলে কি হবে? শিখরে চড়তে চাইলে শেকড় মজবুত করতে হবে! নয়তো হালকা একটা কাল বৈশাখীর ঝাপটায় শেকড়শুদ্ধ উপড়ে পড়তে হবে। সেই এক বালিকার চিৎকারে আরবের মরু থেকে উঠে এলো এক তেজদীপ্ত বালক, দোর্দণ্ড প্রতাপে জয় করে নিল সিন্ধু, ভেঙে দিল জালিমের কালো হাত! মনে আছে সেই কথা? আরে ওই-তো আমাদের শেকড়? তারপর থেকে জমুনার জল কত গড়ালো, কি বিশাল সভ্যতা তৈরি করলাম আমরা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও প্রকৌশলে কত উন্নত ও সমৃদ্ধ হলো আমাদের মহাভারত—যার গর্ভ থেকে উঠে এসেছি আমরা, এসবই আমাদের নাড়ীর কথা, এসব কিছুই মিশে আছে আমাদের রক্তে। আমাদের রক্তের উৎস, নাড়ীর টান, শেকড়ের সংবাদ— এই সকল অজানা অধ্যায় উঠে এসেছে দুই-দুই চার মলাটের এই অনবদ্য গ্রন্থে, সিন্ধু থেকে বঙ্গ। বাবার পরিচয় না পাওয়া বালকটাকে সারা জীবন এই কলঙ্কের বোঝা বয়ে যেতে হয়, কিন্তু নিজ জাতির ইতিহাস না-জানার ভুলটা চাইলে শুধরে ফেলা যায়। ঠিক এই ভুল শুধরানোর প্রয়াসটাই করছে চেতনা প্রকাশন
২০০০ সালের ডিসেম্বর থেকে রহমতের সম্পাদক ছিলেন প্রবল জীবনদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ মুহতারাম মনযূর আহমাদ। মনযূর আহমাদ একজন প্রাজ্ঞ ও প্রথিতযশা সম্পাদক। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি সম্পাদনার কলম দিয়ে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করেছেন। ১৯৯১ থেকে এক দশক জাগো মুজাহিদ-এর নির্বাহী সম্পাদক, দুই হাজারের ডিসেম্বর থেকে দেড় দশক রহমত-এর সম্পাদক—সব মিলিয়ে ১৯৮৫ থেকে শুরু হয়ে চলমান পঁয়ত্রিশ বছরের কর্মজীবনের পঁচিশটি বছরই কাটিয়েছেন এই ডেস্কে! মনযূর আহমাদের জীবন শুরু হয়েছিল পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী থানায়, নলবুনিয়ার বৌডুবীতে ১৯৬৫ সালে। শৈশব-কৈশোরে পড়াশোনা করেছেন বৌডুবীতে এবং তারপর পার্শ্ববর্তী বাদুরা মাদরাসায়। পরিণত পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া এবং গওহরডাঙ্গা মাদরাসায়। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় সমাপ্তি দিয়েছেন হাটহাজারী মাদরাসায়, ১৯৮৩-৮৪ শিক্ষাবর্ষে। ১৯৮৫ থেকেই শুরু হয় তার জীবন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। ঢাকায় তার প্রথম আগমন ঢালকানগরের ছাপড়া মসজিদে। ভাগ্য পরীক্ষার প্রথমপর্বে এখানে তার হাত ধরেন অভিন্ন পথের সহযাত্রী মরহুম মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন। এখান থেকে তিনি বাংলাদেশের ইসলামি আধুনিক রেনেসাঁর অগ্রদূত মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের একান্ত সান্নিধ্য অর্জন করেন এবং যুগের কিংবদন্তি অধ্যাপক আখতার ফারূকের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়ে কলমচর্চায় মনোনিবেশ করেন। সেই কলম শানিত হয় অধ্যাপক আখতার ফারূকের সুদীর্ঘ সংস্পর্শে। তার লেখালেখির প্রথম কীর্তি বিখ্যাত তাফসিরে ইবনে কাসিরের আংশিক অনুবাদ। এরপর চলতে থাকে কলম, অনবরত, আজ পর্যন্ত। তার ইদানীংকালের কীর্তি হল বিখ্যাত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিয়াহ-এর অনুবাদ। এর মাঝে তিনি লিখেছেন অনেক—অনুবাদ, ইতিহাস, প্রবন্ধ। সেসবের কিছু প্রকাশিত, কিছু প্রকাশিতব্য। কিছু নামে, কিছু বেনামে। তবে এসব কীর্তির চেয়ে তার বড়ো পরিচয়—তিনি একজন সফল সম্পাদক। অন্তরালোকসম্পন্ন সম্পাদক। শুধু পত্রিকারই নন, প্রতিষ্ঠিত অনেক তরুণ লেখকের জীবনেরও সম্পাদক তিনি। সেক্ষেত্রে একজন পিতৃসত্তাবান সম্পাদক হিসেবেই তিনি তাঁর পরিচয় উজ্জ্বল করেছেন। যার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত সকল লেখক তাদের নৈকষ্য আড্ডায় খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে গর্বভরেই দিয়ে থাকেন। মনযূর আহমাদকে সর্ববিচারে বলা যায় চেতনা ও শিল্পমগ্ন তারুণ্যের মুখপাত্র। জীবনের নানা ব্যস্ততার ফাঁকেও তিনি একজন মজলিশি মানুষ। তার মজলিশি স্বভাবে রয়েছে রসালাপ, রয়েছে তিক্ত তুখোড় বাস্তবতায় অনায়াস সমালোচনার শিল্প। জীবনের বেলাভূমিতে তিনি এখন বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে এক ধরনের অতিন্দ্রিয় সময় কাটাচ্ছেন—যা তার কাছে গেলে, একটু বসলে, খানিক আলাপ করলে বুঝা যায়। আল্লাহ তাকে কবুল করুন। তার সকল কীর্তি ও প্রচেষ্টা কবুল করুন। জীবনকে তার জন্য সহজ করে দিন।