অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী খ্যাতিমান গীতিকার, সুরস্রষ্টা, কবি ও গবেষক অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরীর জন্ম ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মে তাঁর মাতুলালয় মুুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার শামসপুর গ্রামে। পৈতৃক নিবাস একই জেলার সিরাজদিখান থানার বিক্রমপুর খিলগাঁও গ্রামে। পিতা বজলুল হক চৌধুরী, মা ওম্মে কুলসুম যোবেদা খাতুন ওরফে যমুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ স্নাতক (১৯৪৬) ও স্নাতকোত্তর (১৯৪৭) পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্কে। ঢাকায় সর্বপ্রথম রেডিও কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (১৬.১২.১৯৩৯) হওয়ার পর থেকেই গীতিকার হিসেবে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। দেশভাগের পর তিনি রেডিওর একজন সফল গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমÐলে বেড়ে ওঠা আনিসুল হক চৌধুরীর কবিতা লেখার হাতেখড়ি অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন। দেশভাগের পর বাংলা গানে প্রতিবাদী চেতনা নিয়ে তিনি আবিভর্‚ত হন। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে শেখ লুৎফর রহমানের সুরে ও কণ্ঠে এদেশের সর্বপ্রথম গণসংগীত ‘শুধু ঘুম পাড়ানী গান আজি নয়’ এবং রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বপ্রথম গান, ‘ওরে ভাইরে ভাই, বাংলাদেশ বাঙ্গালী আর নাই’ একদিকে যেমন ইতিহাস হয়ে আছে; অপরদিকে তাঁর রচিত ‘রূপালী নদীরে, রূপ দেইখা তোর হইয়াছি পাগল’ গানটি আবদুল আলিমের কণ্ঠে এদেশের অতি জনপ্রিয় গানরূপে সমাদৃত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ : নিশি ভোরের ফুল (১৯৮৩), রূপালী নদীর গান (১৯৯৩), গানে ভরে মন (১৯৯৩), বাংলার মূল (১৯৯৫)। ২০০৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আনিসুল হক চৌধুরীর জীবনাবসান হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ‘দিন যায় কথা থাকে’ শিরোনামে আত্মজীবনী লেখা শুরু করেছিলেন। শেষ করে যেতে পারেননি। যতটুকু লিখেছেন তাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সংগীতের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের যে বয়ান তিনি তুলে ধরেছেন, তা আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের ইতিহাস নির্মাণে গবেষকদের বিশেষ সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সঙ্গত কারণেই এই বইটিকে এদেশের এক সময়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সংগীতের পরিমলের কিয়দংশের এক নির্ভেজাল দলিল বললেও অত্যুক্তি হবে না। মৃত্যুর এক যুগ পর তাঁর সেই লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।