বাংলাদেশের কথাসাহিত্য, বিশেষ করে ছোট গল্পের মেজাজ-নির্মিতিশিল্পবোধ আর গভীরতা নিয়ে যতবার ভাবতে বসেছি, ততবার নিজেকে জড়সড়-বিব্রত মনে হয়েছে। যে ক‘জনের গল্পের মেজাজ নির্মল মনে হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগেরই উপস্থাপন শৈলী শিথিল; আবার কারো গল্পের প্রাঞ্জল নয়; যাঁদের গল্পের নির্মিতিতে মুন্সিয়ানা আছে; তাঁদের অনেকেরই সমাজ ভাবনায় বিচ্ছিন্নতা দেখেছি। এভাবেই সার্বিক বিবেচনায় প্রিয় ছোটগল্পকারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শাখাওয়াত বকুল বাংলা ভাষার শীর্ষস্থানীয় কোন গল্পকার নন; কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে তাঁর গল্পের বিষয়ে আমি বিশেষ মনোযোগী। তাঁর গল্পের প্রতি মনোযোগী হবার ভিন্ন একটি কারণও আছে; আর সে কারণটি হলো, বকুল বিভিন্ন ভাষার গল্প নিয়মিত অনুবাদ করেন। তাঁর এ অভিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে সহজেই তিনি বিশ্বগল্পশৈলির দ্যুতিকে নিজের গল্পে যুক্ত করে নিতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথ যে ছোটগল্প লিখে রেখে গেছেন, তা আধুনিক এবং আজও প্রাসঙ্গিক; কিন্তু আমরা পাঠক হিসেবে গল্পে নানান প্রসাদগুণ পেতে আগ্রহী; এবং যা হবে সমকালীন আর আধুনিকতর। শাখাওয়াত বকুলের গল্পে সে সম্ভাবনার দ্যুতি দেখতে পাই। এর আগে আমরা শাখাওয়াত বকুলের গল্পগ্রন্থ’ ‘ফাঁসির দূরত্বে থাকা মানুষ’ পড়েছি। এবারের গল্প সংকলন ‘ঘাম ও সাদা মেঘের ঘ্রাণ’-এ আমরা পাচ্ছি বিচিত্র বিষয়ের নতুন আটটি ছোটগল্প; আশা করতে পারি প্রকাশনায় যদি পূর্ণ মনোযোগ এবং যত্ন থাকে, তাহলে ছোট গল্পের পাঠক নতুনত্বে স্বাদ পাবেন। আশা করতে পারি আত্মানুসন্ধান-অনুসন্ধিৎসা আর নিষ্ঠা দিয়ে গল্পকার বকুল নিজেকে আবিষ্কার করে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের আঙিনায় অনিবার্য একজন হয়ে উঠবেন; ঘনিষ্ঠজনের জন্য এমন প্রত্যাশা করা যৌক্তিক মনে করি। ফরিদ আহমদ দুলাল কবি-নাট্যকার-প্রাবন্ধিক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত