তেসরা জুলাই, একাত্তর। বাংলাদেশের যুদ্ধরত শিল্পীদের প্রথম অনুষ্ঠান “রূপান্তরের গান” । রচনা শাহরিয়ার কবির। প্রযোজনা ও উপস্থাপনা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থা যার সভানেত্রী সনজীদা। ভাষা পাঠ হাসান ইমাম। শিল্প-নির্দেশক মুস্তাফা মনোয়ার । সমস্তই সম্মেলক গান একটি বাদে- ফ্লোরা আহমদের 'স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে সমস্ত সম্মেলক গানে-যুগল নেতৃত্ব বেণু ও শাহীনের। স্থান কলকাতার ভারতবিখ্যাত রবীন্দ্রসদন। পশ্চিম বঙ্গের শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীর প্রায় সকলে উপস্থিত। তাঁরা ধন্য ধন্য করলেন, বললেন এমন অনুষ্ঠান হয় না। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ের প্রেরণাসৃষ্টির আদর্শ অনুষ্ঠান। তার মুখবন্ধে ছিল তিন রবীন্দ্রসংগীত 'ঢাকোরে মুখচন্দ্রমা জলদে' 'দেশে দেশে ভ্রমি তব দখ গান গাইয়ে' "ওই পোহাইল তিমির রাত্রি। উপস্থিত ছিলেন সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে নিয়ে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত সকলেই, তাদের অনেকেই মঞ্চে গান করেন। রূপান্তরের গানের ওপর দুইটি জরুরি প্রয়োজন মেটাবার দায় পড়ল । কলকাতার মুসলমান ভাইয়েরা জঙ্গী পাকিস্তানবাদী, ভয়ানক বাংলাদেশবিদ্বেষী। তাদের ভয়ে মুক্তিযোদ্ধারা একা চলতে ভয় পায়। বিপরীতে সময় পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গের বাঙালদের যুদ্ধকে একান্ত আপন করে নিয়েছে। 'রূপান্তরের গান" প্রয়োজন একের বিশেষ প্রশমনে অপরকে প্রেরণা দানে। শরণার্থী শিবিরে লক্ষ লক্ষ দেশত্যাগী বাঙালি মনুষ্যেতর জীবন যাপন করছে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তরুণ যোদ্ধারাও অনশনে-অর্ধাশনে অ্যাকশনের অপেক্ষায়। ঐ দুই জায়গায়ও প্রয়োজন 'রূপান্তরের গান' । মুক্তি-সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার গানের স্কোয়াড শরণার্থী শিবির ও মুক্তিবাহিনীর আড্ডায় দিনে দুটো-তিনটে করে অনুষ্ঠান আরম্ভ করল। নেতৃত্ব দিল ছায়ানটের মাহমুদুর রহমান বেণু- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যগণিত বিভাগের প্রভাষক। তার পাশে থাকল সহধর্মিণী শাহীন আখতার। দুটি সর্বত্র আদৃত হল- রবীন্দ্রনাথের 'চল যাই চল যাই পদে পদে সত্যের ছন্দের এবং গুরুসদয় দত্তের "আবার তোরা মানুষ হ।