‘…আমিনা বেগম এখন স্বামীহারা। তাঁর আশ্রয় বাবা নবাবের কাছে। সিরাজ তাঁর পুত্র। শাহজাদার ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে ষড়যন্ত্রকারী মহলটা। তারা ভেবেছে এক গুলিতে দু’টি শিকার করবে, এমনকী তিনটিও হতে পারে। যে প্রকারেই হোক, বোনের পক্ষ নিয়ে দোষ চাপাবে নিরপরাধ শাহজাদার বেগমের ওপর। বার বার বলা হলে, এমনকী এখানে সাক্ষী দাঁড় করিয়ে দিলে শাহজাদা এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে, তাঁর বেগমই তাঁর মা’কে বিষ প্রয়োগ করেছেন।…’ মসনদ উপন্যাসের যৎসামান্য এক অংশ। কিন্তু এটুকু পড়লেই প্রতীয়মান হয়, কেমন ছিল অষ্টাদশ শতকের সেই সময়কাল। বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব নাজিম আলিবর্দি খান। তিনি দত্তক নিয়েছেন কন্যা আমিনা বেগমের এক ছেলে সিরাজ-উদ-দৌলাকে। নিজের জামাই তথা আমিনার স্বামী জয়েন-উদ-দীনকে সেনাবাহিনীর শীর্ষে বসিয়েছিলেন আলিবর্দি, কিন্তু অন্দরমহলের ষড়যন্ত্রে তিনি খুন হয়ে গেছেন। এবার ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য সিরাজ। কারণ তারা বুঝতে পারছে, এই নাতিটিকে বিশেষ স্নেহ করেন নবাব। এরপর সিরাজ-উদ-দৌলাই বসবে বাংলার মসনদে। সেটা কি হতে দেওয়া যায়? তারপর?…সে এক উত্তাল সময়। একদিকে মারাঠা বর্গীদের হানায় বাংলা বিধ্বস্ত, অন্যদিকে গুটিগুটি পা ফেলছে লালমুখো ইংরেজ। তাদের নিষ্কর ব্যবসা করার সনদ দিয়েছে দিল্লির বাদশাহ। কিন্তু সিরাজ ওদের মোটে বিশ্বাস করে না।…তলে তলে মীরজাফর ও অন্যরা যোগাযোগ রেখেছে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। কী হতে চলেছে? মসনদ শেষ পর্যন্ত কার দখলে থাকবে? বিরাট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, অসংখ্য ছোটবড় চরিত্র নিয়ে মস্তবড় উপন্যাস ‘মসনদ’, যার পাতায় পাতায় ঘটনার ঘনঘটা, হিংসা স্নেহ মমত্ব একসঙ্গে চলেছে।