ফিকহু রমাদান এ গ্রন্থটিতে শাইখ আহমাদ মূসা জিবরীল হাফিজাহুল্লাহ অনেক সুন্দরভাবে রমাদানের বিভিন্ন মাসআলা আলোচনা করেছেন। তিনি হাম্বলী মাযহাবের কিতাবকে সামনে রেখে আলোচনা করলেও মাসআলাগুলো আলোচনা করার ক্ষেত্রে একটি মাযহাবের ওপর সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং তুলনামূলক ফিকহি মাসআলাগুলোও আলোচনা করেছেন। ইমামদের মতামতগুলো তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের ইমামদের মতামতগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। এরপর কেন ও কীভাবে এই মতগুলো এলো, কোনটি সঠিক হতে পারে ইত্যাদি দেখিয়েছেন। উসুলুল ফিকহ ও তুলনামূলক ফিকহের আলোকে মাসাআলাগুলো তিনি আলোচনা করেছেন। আর এগুলো আলোচনা করতে গিয়ে কখনো জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কখনো হাম্বলী মাযহাবের মুতামাদ মতকে তার নিজ ইজতিহাদি যোগ্যতার আলোকে ভুল বা দুর্বল বলেছেন, আবার কখনো শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহর মতকে দুর্বল বলেছেন, আবার কখনো প্রাধান্য দিয়েছেন। শাইখের এমন বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার কারণে, বইটির বিশেষত্ব হলো—এর মাধ্যমে পাঠক এখান থেকে মাসআলা শেখার পাশাপাশি জানতে পারবেন মাসআলাটা কীভাবে এবং কী পদ্ধতিতে এলো। সেই সাথে জানতে পারবেন মুজতাহিদ ইমাম বা উলামায়ের কেরামের ভিন্নমতের দালিলিক ও যৌক্তিক কারণ—যা একজন পাঠককে ভিন্নমতের প্রতি উদার ও সহনশীল হতে সহায়তা করবে।
রমাদান প্ল্যানার আসন্ন রমাদান উপলক্ষ্যে মুসলিমদের প্রোডাক্টিভিটি ও ডে প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করা প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান ‘মুসলিম ডে প্ল্যানার’-এর নতুন আয়োজন ‘রমাদান প্ল্যানার’। প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ১লা মার্চ ২০২৩ ইন-শা-আল্লাহ । আমাদের অন্যান্য প্ল্যানার ও নোটবুকগুলোর মতোই রমাদান প্ল্যানারেও থাকছে, চমৎকার ডিজাইনসহ রুটিনমাফিক কর্ম-পরিকল্পনার ছক। বছরের সেরা মাস রামাদান দোরগোড়ায় চলে এসেছে। তাকওয়া অর্জনের মাস, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাস, ক্ষমা ও রহমাতের মাস, রমাদান। এ মাসে সকল ভালো কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয় বহুগুণে। তাই এ সময় প্রত্যেকেরই নিয়াত থাকে একটু বাড়তি আমল করার । একটি সুন্দর-গুছানো দৈনন্দিন রুটিন, আমলের পরিকল্পনা আপনাকে বহুদূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই মুসলিম ডে প্ল্যানার এবার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে এক চমৎকার রামাদান প্ল্যানার। রামাদান প্ল্যানারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবে রামাদানের চাঁদ দেখার মুহূর্ত থেকে শুরু করে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত প্রতিটি কাজ আপনি যেন প্রোডাক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্টের সহিত, প্রতি ওয়াক্ত সালাতের সাথে তাল মিলিয়ে করে যেতে পারেন। আপনার যেন বেখেয়ালে সময়ের অপচয় না হয়ে যায়। আপনি যেন খেই হারিয়ে না ফেলেন অন্য ব্যস্ততায়। এই প্ল্যানারে বিশেষভাবে রমাদানের সারাদিনের অসংখ্য আমল যুক্ত করা হয়েছে। অনেকের পক্ষে নানান ব্যস্ততায় ন্যূনতম আমল করাও অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাঁরা হতাশ হবেন না। ইখলাসের সাথে নিয়াত, পরিকল্পনা ও দুআ চালিয়ে যান। আমাদের রব অনেক বারাকাহ ঢেলে দেবেন সবকিছুতে ইন-শা-আল্লাহ। আর যারা অনেক বেশি আমলের সুযোগ পান, তাঁরাও যেন নিজের পছন্দের আমলসমূহ সময়ের সাথে গুছিয়ে করতে পারেন, সে জন্য প্ল্যানারের প্রত্যেক ছকে রাখা হয়েছে পরিকল্পিত খালি ঘর। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত আপনি কী খাচ্ছেন, কতখানি পানি খাচ্ছেন এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার সারাদিনের সিয়াম ও শারীরিক, মানসিক, ঈমানের অবস্থার ওপরে। তাই এই বিষয়টিও আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনি রমাদানের প্ল্যানিং-এর ক্ষেত্রে। গুরুত্বপূর্ণ কলাম হিসেবে উঠে এসেছে প্রতিদিনের পরিকল্পনায়। মজবুত ঈমান, সুস্থ শরীর, সুপরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম, সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্য—এ সবকিছুর সমন্বয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে ইন-শা-আল্লাহ। এ যাত্রায় আপনার সহযোগী হতে চায় আমাদের রমাদান প্ল্যানার।
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। বাবা শাইখ মুসা জিবরিল মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলে আহমাদ মুসা জিবরিল শৈশবের বেশ কিছু সময় মদীনায় কাটান। সেখানেই এগারাে বছর বয়সে তিনি কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। বুখারি ও মুসলিম মুখস্থ করেন হাইস্কুল পাশ করার আগেই। শাইখ আহমাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৮৯ সালে হাইস্কুল পাশ করেন এবং কৈশােরের বাকি সময়টুকু সেখানেই কাটান। পরবর্তীকালে তিনি বুখারি ও মুসলিম-এর সনদ মুখস্থ করেন৷ এরপর কুতুবুস সিত্তাহর বাকি চারটি গ্রন্থও মুখস্থ করেন। শাইখ আহমাদও তাঁর বাবার মতাে মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহর ওপর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি ও আইনের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। শাইখ আহমাদমুসা জিবরিল বহু আলিমের কাছ থেকে ইলম অধ্যয়ন করেন। আঠারাে বছর বয়স হবার আগেই তিনি তাঁর বাবার কাছে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর পুরাে মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (৩৭ খণ্ডে সমাপ্ত), ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম -এর কিতাব ও ইমাম ইবনু হাযম -এর আল মুহাল্লা (১১ খণ্ডে সমাপ্ত) পড়ে ফেলেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ ইবনু উসাইমিন -এর তত্ত্বাবধানে অনেকগুলাে কিতাবের অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে অত্যন্ত বিরল তাযকিয়াহও লাভ করেন। শাইখ বাকর আবু যায়িদ -এর সাথে একান্ত দারসে তিনি আল ইমাম। ওয়াল মুজাদ্দিদ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবৃদিল ওয়াহহাব , ও শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর কিছু কিতাবও অধ্যয়ন করেন। শাইখ মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানকিতি -এর অধীনে চার বছর পড়াশােনা করেন তিনি। শাইখ আহমাদ আল্লামা হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন, তাঁর কাছ থেকে তাযকিয়াহও লাভ করেন। তিনি তাঁর বাবার সহপাঠী শাইখ ইহসান ইলাহি জহির -এর অধীনেও পড়াশােনা করেছেন। শাইখ ইহসান আমেরিকায় কিশাের শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের সাথে পরিচিত হবার পর চমৎকৃত হয়ে তাঁর বাবাকে বলেন, ইন শা আল্লাহ আপনি একজন মুজাদ্দিদ গড়ে তুলেছেন। তিনি আরাে বলেন, এই ছেলেটি তাে আমার বইগুলাে সম্পর্কে আমার চেয়েও বেশি জানে। ‘আর রাহিকুল মাখতুম’-এর লেখক শাইখ সফিয়ুর রাহমান মুবারাকপুরি -এর অধীনে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি অধ্যয়ন করেন শাইখ মুকবিল, শাইখ আব্দুল্লাহ গুনাঈমান, শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব এবং শাইখ আতিয়াহ আসসালিম (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর অধীনে। শাইখ আতিয়াহ আসসালিম ছিলেন শাইখ আল্লামাহ মুহাম্মাদ আল আমিন শানকিতি -এর প্রধান ছাত্র, শাইখ আশ-শানকিতি -এর ইন্তিকালের পর তাঁর প্রধান তাফসিরগ্রন্থ ‘আদওয়ায়ুল বায়ান’-এর কাজ তিনিই শেষ করেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর শাইখ ইবরাহিম আলহুসাইন -এরও ছাত্র ছিলেন। “আললাজনাহ আদদাইমাহ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতাহ —Permanent Committee for Islamic Research and Issuing Fatwas—এর প্রথম দিকের সদস্য শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাওদ -এর সাথে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাজ্জ করার সুযােগ লাভ করেন। এছাড়া দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষাণাবেক্ষণ কমিটির প্রধান শাইখ সালিহ আল হুসাইনের অধীনেও তিনি অধ্যয়নের সুযােগ পান। আহমাদ মুসা জিবরিল মুহাদ্দিস শাইখ হামাদ আল আনসারি ও-এর অধীনে হাদীস অধ্যয়ন করেন এবং তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। তিনি শাইখ আবু মালিক মুহাম্মাদ শাকরাহ -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন। শাইখ আবু মালিক ছিলেন শাইখ আলবানি -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শাইখ আল-আলবানি ওয়াসিয়াহতে শাইখ আবু মালিককে তার জানাযার ইমামতি করার জন্য অনুরােধ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল রবি আল মাদখালির জামাতা শাইখ মুসা আলকারনিরও ছাত্র৷ কুরআনের ব্যাপারে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ মাবাদ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে ইজাযাহপ্রাপ্ত হন। শাইখ মুসা জিবরিল ও শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ইলম থেকে উপকৃত হবার জন্য শাইখ বিন বায ও আমেরিকায় থাকা সওদি ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। শাইখ বিন বায -এর মৃত্যুর তিন মাস আগে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ব্যাপারে মন্তব্য করার সময়ে শাইখ বিন বায ও তাঁকে ‘শাইখ’ হিসেবে সম্বােধন করে বলেন, তিনি তাঁর সুপরিচিত এবং উত্তম আকিদাহ পােষণ করেন। | শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসরত আছেন।