বহতা নদীর মতো ভাষা ক্রমেই এগিয়ে চলে। ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, নানা ধরনের মিলনে-মিশ্রণে ভাষা যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি মর্জিমাফিক জবরদস্তিমাফিক বদলে দেওয়ার প্রচেষ্টাও ভাষা সবসময় রুখে দাঁড়ায়। জাতির ইতিহাসে ভাষার এই লড়াকু ভূমিকা বাংলা ও বাঙালির জীবনে পেয়েছে আলাদা মাত্রা। সেটা এতটাই বিশিষ্ট যে বাঙালির ভাষা-শহিদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছে। বাংলা ভাষার এই গৌরব ও মর্যাদা আমাদের নজর ফেরাক ভাষার গৌরবের দিকে, ইতিহাসের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমণে ভাষার লড়াইয়ের বিভিন্ন ছবি স্বচ্ছভাবে ফুটে উঠুক কিশোর-কিশোরীদের মনে—এই তাগিদ থেকে ছড়ার ছন্দে ভাষার লড়াইয়ের ইতিহাস মেলে ধরেছেন রফিকুর রশীদ। ছোটদের জন্য লেখালিখির সুবাদে যিনি ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ছন্দ ও শব্দের ঝংকারে অনুরণিত করে ভাষার এই ইতিহাস শিশু-কিশোরসহ সকল পাঠকের কাছেই চিত্তাকর্ষক করে তুলেছেন লেখক। নবীন পাঠকেরা এই ছড়াগ্রন্থের আনন্দপাঠের মধ্য দিয়ে কেবল ভাষার লড়াই নয়, সেই ইতিহাসের সূত্রে জানবে সময় ও সমাজকেও। মনের পর্দায় ফুটে উঠবে দেশের গৌরবের বড় ছবি। এখানেই এই ছোট্ট বইয়ের সার্থকতা।
রফিকুর রশীদ। জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। মন টেকে না সেখানে। যােগ দেন কলেজ। শিক্ষকতায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে মেহেরপুরের গাংনী কলেজ থেকে তিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। নিভৃতে কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু হলেও সত্তর দশকের শেষভাগে পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখেই তাঁর আত্মপ্রকাশ সাহিত্যজগতে। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। ছােট-বড় সকলের জন্যে। নির্মোহ চরিত্র চিত্রণ এবং বর্ণনার বিশ্বস্ততাই কথাশিল্পী হিসেবে তাকে এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ছােটদের জন্য লেখা গল্প এবং উপন্যাসে রফিকুর রশীদ এনেছেন বিপুল বিষয় বৈচিত্র্য। প্রিয় প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ তাে আছেই, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলে ভরা বিচিত্র বর্ণে বর্ণিল ছােটদের নিজস্ব ভুবনের আলােকিত উপস্থাপন ঘটে চলেছে তার লেখা শিশু ও কিশাের সাহিত্যে। স্বপ্নজয়ের কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মােহাম্মদ খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশু ও সাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্র পুরস্কার (ভরত) প্রভৃতি।