জসিম চৌধুরীর ছোট ছোট কবিতাগুলো পড়ে পাঠক একটি বৈপরীত্যের দোলা খাবেন। জীবন-মৃত্যু, হাসি-কান্না, সুখ-অসুখ, থাকা না-থাকা, পাড় ভাঙা পাড় না-ভাঙা, বোঝা না-বোঝা এভাবে পার্থিব মানবজীবনে যে দ্বৈততার অস্তিত্ব তাকে একটি কাব্যিক দর্শন দিয়েছেন জসিম। তাঁর কবিতার তাড়না পাঠককে বারে বারে ছুঁয়ে যাবে, কেন না সরাসরি জীবনের সত্যতা সম্পর্কে জসিম নিঃসংকোচে বলে গেছেন-খানিকটা কাব্যিক প্রকরণের বাইরে গিয়েও - যেমন, এই পংক্তিটি দেখুন - “সফলতা আমাদের কাছে নয়, সফলতার কাছেই আমরা। / সুতরাং সফলতার কাছে পৌঁছানো আমাদেরই দায়িত্ব।” সফলতা নিজে কখনো ধরা দেয় না, সফলতাকে ধরতে হয় - কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে, যার ফলে সফল যার হওয়ার কথা সে সফল হয় না, কিন্তু যার সফল হবার কথা নয় সে সফল হয়। জীবনের এই বিচিত্র ধন্ধ কিংবা রহস্যের কথা জসিম বলছেন না, এক, হয়ত তাঁর অভিজ্ঞতা সে দিকে - মানে নিষ্ফলতার দিকে যায়নি, কিংবা তিনি স্বভাবে একজন আত্মপ্রত্যয়ী কবি - তাই সফলতা তাঁর আসবেই। বুঝতে পারা - সে জীবন হোক, কিংবা প্রেম হোক, কিংবা হোক অন্যতর কিছু, মানুষ কি বুঝতে পারে সে কে? কঠিন একটি দার্শনিক প্রশ্ন, এবং জসিম চৌধুরীর কবিতায় তা ফুটেও উঠেছে বেশ ভালোভাবে। “কবিতার মতো তোমাকেও বুঝি না”- তারপর প্রায় তিন স্তবক জুড়ে নানান কিছু না বোঝার তালিকা। কিন্তু শেষ স্তবকে গিয়ে কবি স্বীকার করলেন যে - “তাই আমি বলতে পারি / তাবৎ পৃথিবীতে আমি কিছুই বুঝিনা / শুধু তোমাকেই বুঝি।” এই থিমটির সঙ্গে, অর্থাৎ যেটাকে বলা যায় প্রেমের ব্যতিক্রম্যতা বা এক্সেপশনালিজম, সেটার সঙ্গে আমরা পরিচিত - যেটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘শ্যামা’ গীতিনাট্যে উত্তীয়ের মুখ দিয়ে বলছেন, “ন্যায় অন্যায় জানি নে, জানি নে, জানি নে, / শুধু তোমারেই জানি, তোমারেই জানি / ওগো সুন্দরী।” জসিম প্রায় তার প্রতিধ্বনি করে বলছেন, “এক চিলতে তুমি - এক চিলতে আমি।”