দুটি কথা হঠাৎ মনে একটি ভাবনা আসে, আজকের ব্যবস্থায় যদি তাজমহল বানানো হয় তবে কী হবে? আর ব্যস, অনেক চরিত্র নেমে আসে আর আমি লিখতেই থাকি। তারা কী করছে, স্বয়ং আমাকে তা আর ভাবতে হয়নি। এত সহজে আমি আর কখনো কিছু লিখিনি। আসলে, এই নাটকে কেবল শাহজাহান একটি কাল্পনিক চরিত্র, অন্য সবই বাস্তব। 'তাজমহলের টেন্ডার' ১৯৯৩ সালে লেখা হয়েছে। তারপর পাঁচ বছর লাগে এটি মঞ্চায়িত হতে। বড় রুষ্টতাপূর্ণ ছিল সেই সময়টুকু। যে নির্দেশকের কাছেই এই নাটক পড়তে দিয়েছি তিনিই কাঁদো কাঁদো মুখে একে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমন কিছু প্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে: ‘এটা ঐতিহাসিক নাটক নাকি সামাজিক?’ ‘শাহজাহান আজকের জমানায় কেন তাজমহল বানাবে, এ কথা বুঝতে পারছি না।’ ‘মজা পাইনি, বোর লেগেছে।’ শেষ পর্যন্ত ১৯৯৮ সালে এন.এস.ডি. রেপার্টরি এর প্রথম মঞ্চায়ন করে। আর তারপর তো মঞ্চায়নের ধারা চলতে থাকে। ভারতের সকল ভাষায় অনুবাদও হয়েছে এবং বিদেশেও নিরন্তর হচ্ছে। লেখার ২৩ বছর পর আজও এই নাটক ততটাই জনপ্রিয় আছে। কারণ এর প্রাসঙ্গিকতা। কেননা এই নাটক আমাদের দেশের ভ্রষ্ট ব্যবস্থার গায়ে এক শক্ত আঘাত। কিন্তু ভাবছি, এরকমই কি চলবে? ব্যবস্থা ভ্রষ্ট থাকবে আর আমরা নাটক দেখে খুশি হতে থাকব? বলব, ভাই বড় মজা পেয়েছি! এই অবস্থায় লেখক নাটকের জনপ্রিয়তা দেখে খুশি হবে নাকি দৃঢ়বদ্ধ ভ্রষ্ট ব্যবস্থা দেখে কাঁদবে? সকল বিশ্লেষকই এই নাটককে ‘হাস্য-ব্যঙ্গ’ শ্রেণীতে স্থান দিয়েছেন। আমার মনে হয়, এখন একে জাতীয় সংকটের শ্রেণীতে স্থান দেবার সময় এসে গেছে। তবুও, ব্যবস্থার সকল কর্ণধারকে এই নাটক উৎসর্গ করছি। অজয় শুক্লা অনুবাদকের কথা ‘তাজমহলের টেন্ডার’ নাটক সম্পর্কে অনুবাদক হিসেবে কিছু বলা খুব বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় না। এই নাটকের ঘটনাবলীতে একটা আবরণ আছে। এই আবরণ অতি সহজেই ছিঁড়ে ফেলতে পারেন পাঠক-দর্শক। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে সমকাল। মূলত সমকালই এই নাটকের বিষয় এবং সেই সমকাল ভারত এবং বাংলাদেশের জন্য একই রকম। একই রকম 'সিস্টেম'-এর জালে বন্দি আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং উন্নয়ন। মনোযোগী পাঠক কিংবা দর্শক অতি সহজেই এর ঘটনাবলীকে বর্তমান বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। বুদ্ধিমান পাঠকের জন্য এর চরিত্রগুলোকে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বা সামাজিক শ্রেণীর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা আয়াসাধ্য নয়। সে কাজের ভার পাঠক-দর্শকের উপর রইল। নাট্যনির্দেশক বন্ধুবর মীর বরকত অনুরোধ করেছিলেন একটি উপভোগ্য নাটক অনুবাদ করতে। তাঁরা এই নাটকের মহড়া করছেন। আশা করি শীঘ্রই ঢাকার মঞ্চনাটকের দর্শকগণ এর রস উপভোগ করবেন। নাট্যকার অজয় শুক্লা অতি সজ্জন। যোগাযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই নাটক অনুবাদ, মঞ্চায়ন এবং প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। তাঁকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিল্পৈষী এই অনুবাদ-নাটক প্রকাশ করবার দায়িত্ব নিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করেছে। সফিকুন্নবী সামাদী