ভূমিকা বেদে জনগোষ্ঠী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত চারটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষেত্রসমীক্ষার সময় বেদেদের জীবনের এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা গবেষণাগ্রন্থে তুলে ধরা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনের অমোঘ সত্য হচ্ছে মৃত্যু; কিন্তু সেই মৃত্যুও বেদেদের জীবনে ভয়ংকর কিছু নয়। মৃত্যুর ভেতর দিয়ে তাদের জীবন শেষ হয়ে যায় এমনটা তারা ভাবে না। একই সঙ্গে বিবাহ, প্রেম, যৌনতার মতো বিষয়গুলোও অনেকটা স্বাভাবিক। আধুনিক সমাজে যা অপরাধ, বেদেদের সমাজে তা মোটেও অপরাধ নয়। আধুনিক সমাজে একটি লাভ চাইল্ড যতটা অনাদরণীয়, ঠিক ততটাই আদরণীয় সে বেদে সমাজে। ভোটাধিকার না থাকা সত্ত্বেও বেদেরা রাজনীতির বাইরের কেউ নয়। তাদের জীবনের অনেক ঘটনা ঐতিহাসিক হলেও ইতিহাস তাদের ঘটনাকে ধরে রাখে না। বেদেরা পিতৃতান্ত্রিক হলেও সমাজে মেয়েদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মেয়েদের স্বাধীনতা এখানে সেফটিপিনের মতো ছোট ছোট সংস্কার ও প্রথায় আটকে থাকে। বেদেসমাজে মেমরি শব্দটি একটি ক্লাসিফ্যাক্টরি কিন টার্ম। কেননা, শব্দটি দ্বারা একই সঙ্গে একাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ককে বোঝানো হয়। মেমরি শব্দ দ্বারা মা, মেয়ে এমনকি শাশুড়িকে বোঝানো হয়। যে অর্থে মা সম্মাননীয় ও আদরণীয়, ঠিক সেই অর্থেই মেয়ে সম্মাননীয় ও আদরণীয়। বেদে সমাজে নারী অর্থাৎ মা এবং মেয়েই অর্থনীতির ঢাকা সচল রাখে। তাই সমাজের প্রথা, সংস্কার ও বিশ্বাসও তারাই ধরে রাখে। তাই বলে প্রাচীন সময়ের অধীনতা মেনে নিয়ে চিরকাল সনাতনী জীবনাচারে মানুষ নিজেকে আবদ্ধও রাখতেও চায় না। ফলে সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। একদিকে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য,বিশ্বাস, অন্যদিকে আধুনিক সময়ের জীবনযাত্রা মধ্যকার দ্বন্দ্ব একটি মেয়েকে কীভাবে বিপর্যন্ত করে তোলে, মেমরি হচ্ছে তারই আখ্যান। আশা করি, এই উপন্যাসের মাধ্যমে মাল গোত্রের বেদেদের একটি ছোট্ট দলের জীবনপদ্ধতি ও জীবনবোধ সম্পর্কে পাঠক কিছুটা ধারণা অর্জন করতে পারবে। এই উপন্যাসে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রসমীক্ষাভিত্তিক সত্যতা রয়েছে। এই উপন্যাস পাঠে বেদে সমাজের মানুষ সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সে-ধারণা কিছুটা হলেও কেটে যাবে। এই দুয়ের রঞ্জনা বিশ্বাস মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬।
রঞ্জনা বিশ্বাস ১৯৮১ সালের ১০ ডিসেম্বর গােপালগঞ্জের। কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের খাগবাড়ি গ্রামে। জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নির্মল বিশ্বাস ও মাতা পরিমলা। বিশ্বাস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ (২০০৯), “আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি। (২০১০), “বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস' (২০১৬) তার কবিতার বই। কবিতা ও ফোকলাের তার আগ্রহের বিষয়। কবিতা চর্চার পাশাপাশি ফোকলােরচর্চাকেও তিনি। ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। কোটালীপাড়া এলাকার রূপকথার সংগ্রহ নিয়ে বের হয়েছে- ' জয়নালবাদশা ও রাজপুত্র তাজেম' (২০১১) ও ‘উড়াল ঘােড়া’ (২০১৭)।। এছাড়া বের হয়েছে শিশুতােষ বই- ‘খােকার বাংলা (২০১৯)। তার উল্লেখযােগ্য গবেষণাকর্ম- ‘বেদে। জনগােষ্ঠীর জীবনযাত্রা' (২০১১), রবীন্দ্রনাথ : কাবুলিওয়ালা, সুভা ও দালিয়া’ (২০১২), বাংলাদেশের। বেদে জনগােষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়’ (২০১৫), সাহিত্যে। বেদে সম্প্রদায়’ (২০১৬), ‘কিতুবীম : হিব্রু কবিতার। সাহিত্যমূল্য (২০১৭), লােকসংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও। মুক্তিযুদ্ধ’ (২০১৭) মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, ১ম খন্ড। (যৌথ) (২০১৯), বেদে জনগােষ্ঠীর ভাষা উৎস ও তাত্তিক। বৈশিষ্ট্য (২০১৭), এবং বেহুলা বাংলার ৭১ সিরিজের। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস ‘বিষুদবারের বারবেলা’ (২০১৭)। গবেষণাকর্মের জন্য তিনি কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০১৫ অর্জন করেন ।