মাহবুবা হক কুমকুম শিশু বয়স থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। এই নিবেদিত প্রাণ শিশু সাহিত্যিক বিশ শতকের সত্তর ও আশির দশকে কচিকাঁচার আসর, খেলাঘর, চাঁদের হাট, ধান শালিকের দেশ, শিশু কিশোরবাংলা, নবারুণসহ সকল শিশুতোষ পাতা ও সাময়িকীতে নিয়মিত লিখতেন কুমকুম। একজন শিশু সাহিত্যিকের যে বিপুল পঠন-পাঠনের মধ্যদিয়ে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন তিনি স্কুল জীবনের সীমানাতেই। ছোটদের জন্য শিশু কিশোর কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্পসহ নানাবিধ রচনায় সমৃদ্ধ তার লেখা ভান্ডার। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এই প্রতিভাবান শিশু সাহিত্যিক যে বিপুল পরিমাণ লেখালেখি করেছেন তার তুলনায় তার গ্রন্থ প্রকাশের আগ্রহ নেই বললেই চলে। বই প্রকাশের তার এই বিমুখতার কারণ জানি না। তবে কুমকুমের মত শিশু সাহিত্যিকদের বইপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হওয়া যে জরুরি সেটা আমি বহু বছর ধরে উপলব্ধি করছি। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে তার ছড়াগল্প কুতুভতুর যুদ্ধ প্রকাশিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। পাণ্ডুলিপিতে চোখ বুলিয়ে মনে হয়েছ এই ছড়াগল্পে কেবল শিশু-কিশোর পাঠকদের মনোরঞ্জনই করেননি। কুমকুম, সামাজিক-রাজনৈতিক অসঙ্গতি চমৎকার প্রতীকী ভাষায় তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে মেধার স্বাক্ষর রাখা মাহবুবা হক কুমকুম লেখালেখির ক্ষেত্রেও তার মেধার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ ভাষা যেমন প্রাঞ্জল, তেমনি বিষয়বস্তু বিচিত্র। উপমা-অলংকার ব্যবহারের পাশাপাশি ছন্দের বিশুদ্ধতা এবং নিখুঁত অন্তমিলের ঐশ্বর্যে মাহবুবা হক কুমকুমের এই ছড়াগল্পের বইটি পাঠকদের যে মুগ্ধ করবে, একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। তার লেখার একজন মুগ্ধ পাঠক হিসেবে বইটি প্রকাশের মুহূর্তে তাকে অভিনন্দন জানাই। —নাসির আহমেদ (কবি ও সাংবাদিক)