প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর এক চিরসবুজ তরুণের নাম তাজুল মোহাম্মদ। ১৯৮০ সালে শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা। দেশের একটি জেলাকে কেন্দ্র করে গবেষণা শুরু করলেও ৪৩ বছরে তা ছড়িয়ে পরে ৬৪ জেলায়। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম হাতিয়া পরৈকোড়া, কলসকাঠি, থানাপাড়া, সুরিকোনা- সর্বত্রই পড়েছে পদচিহ্ন। গবেষণা করেছেন একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে । তাজুল মোহাম্মদ একবার দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে কাজ করেছেন ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়। এসব নিয়ে রয়েছে তাঁর আলাদা আলাদা গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রবাসী-বাঙালি সমাজ, যুদ্ধদিনের কড়চা, মুক্তিযুদ্ধের গাথা, প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠ করলে উপলব্ধি করা যায় কি পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন দেশে-দেশে। সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল আনোয়ার উল আলম শহীদ তাঁর এ কাজের কিছু ফিরিস্তিও দিয়েছেন। মফিদুল হক, ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ড. কামাল হোসেন, ড. আনিসুজ্জামান, এস এম আব্রাহাম লিংকনসহ আরও অনেকের লেখা থেকে অধিক জানা যায় এই পরিশ্রমী তৃণমূল গবেষক সম্পর্কে। তাজুল মোহাম্মদ গবেষণার কাজ করেছেন ‘দ্য ওয়্যার ক্রাইমস ফাইল' নামক বিখ্যাত প্রামণ্য চিত্রের। ওরাল হিস্ট্রি সংগ্রহ করে দিয়েছেন ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল ওরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জন্য। বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ৭৭টি গ্রন্থ। সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও অদম্য উৎসাহে চড়ে বেড়ান গ্রাম-গঞ্জ। পেয়েছেন বাংলা একাডেমির পুরষ্কার ও ফেলোশিপ। ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র এওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করেছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।