ইয়াসিনুর রহমান কবিতার মঞ্চে দাঁড়ালে হাজার হাজার দর্শক মুগ্ধতায়, মগ্নতায় কবিতামুখী হতেন, হাততালি দিতেন। বাংলা কবিতা ছিলো শোনা ও শোনানোর বিষয়। পরিবেশনের সেই আঙ্গিককে তিনি কাব্যিক ঐশ্বযে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কবি ইয়াসিনুর রহমান মনে হয় কবিতা শোনানোর শেষ প্রতিনিধি। কী আশ্চর্য ভাষা তাঁর। কী পরিবেশন! শ্রোতারাও কী নির্জন! কবি ও কবিতায় সমাচ্ছন্ন। কবিতা শুনিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেউ উপার্জন করতে পারে! এই বঙ্গদেশে এও কি সম্ভব! সেই নব্বই দশকে টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, চারুকলা কিংবা জাদুঘরের সামনে তিনি কবিতা পড়েছেন। তরুণেরা কবিতা শুনেছেন। প্রতি কবিতায় দুই টাকা সম্মানী। দিন শেষে পকেট ভরে বাজার করে ঘরে ফিরেছেন। কবির কবিতা শোনানোর উপার্জনে চলতো বন্ধুদের ঢাকাবাস। উপস্থাপককে বলে দিতে হতো না, তুমুল জনপ্রিয়তায় মঞ্চের চারপাশে উচ্চারিত হতো ইয়াসিন, ইয়াসিন। তিনি কবিতা পড়ে নেমে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লোকপ্রিয় কবিরাও না-কি মঞ্চে সুবিধা করতে পারতো না। কিন্তু কী এক বিপুল পরিতাপে তিনি ঢাকা ছেড়ে মগড়ার পাড়ে চলে এলেন। এখন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো স্তব্ধ হয়ে বেঁচে আছেন মোক্তারপাড়ায়। কাহিনি কবিতার দিন আর নেই বোধ হয়, কিন্তু আমাদের জনপ্রিয় সাড়া জাগানো একেকটা কবিতার অন্তর্মূলে খুব ছোট করে হলেও আখ্যানের আভাস আছে। আবৃত্তিকারদের কাছে এইসব কবিতাই খুব সমাদরের, সাধারণ পাঠকের কাছেও সহজবোধ্য। যে কবিতা সকলের কাছে ভালো লাগে তা যে শিল্পমূল্যে দুর্বল এ-কথা কে বলবে? ইয়াসিনুর রহমানের সব কবিতাই সহজ, সুপাঠ্য এবং আবৃত্তিযোগ্য। সমাজ ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই সহজ ও নির্ভার ভাষায় কবির কবিতায় উঠে এসেছে। তাঁর কবিতা পড়া মানে সমাজকেই পড়া। বর্তমানকে স্পর্শ করার একটা দক্ষ ভাষা তিনি গড়ে তোলেছেন। ছোট ছোট একেকটি কবিতায় জীবন খণ্ডিত নয়; স্পষ্ট আছে সময়ের সত্য ও সৌন্দর্যবোধের নির্যাস। কবিতাগুলো স্বপ্ন দেয়, দিশা দেয়া। কবিতায় তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। চলমান কাব্যপ্রবাহের ভেতর দিয়েই সময়ের ব্যক্তিত্ব, পরিসর ও দৃশ্যমানতাকে লিখে গেছেন।