প্রকৃতির এপিক থেকে জীবনের কোণে কোণে শব্দের নক্সা-ফুল বুনতে চায় কামরুন নাহারের কবিতা। সে সব কবিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক জীবনে প্রকৃতির প্রতিফলিত ছবি থেকে তুলে আনে মনোজাগতিক অনুকম্পা, এমনকি রূঢ় বাস্তবতা- ‘আর, এখানে এক রমণী বুনছে ওম- বুনছে একা’। কামরুন নাহারের কবিতা পাঠে পাঠকের নিরুদ্বেগ হৃদয়ে এ অনুভূতি পৌঁছে যেতে পারে যে তিনি যেন তাঁর কবিতার ইন্দ্রিয়ে আবছায়ার মায়া বিছিয়ে দিতে চেয়েছেন। এসব কবিতা সহজপাঠ্য, সাবলীল অথচ গভীর অর্থবহ। ‘হায় মাবুদ, কি দারুণ অহমে, খুলে বুক পাখা/ উড়ে গেছি নীল আর নীলিমায়/ তারপর ভরাডুবি, এলোমেলো ছোটাছুটি/ ছিন্ন সুতার টান-মুক্ত করেছে জীবন/ স্বপ্নের সিংহদুয়ার’। বিশ্বপ্রকৃতি জলের এক অনবদ্য লীলাভূমি। সেদিক থেকে এ পর্যবেক্ষণে আশ্চার্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই যে, কামরুন নাহারের কবিতায় জলের প্রসঙ্গ এসেছে ঘুরেফিরে নানাভাবে, বহুমাত্রিক রসায়নে। সমাজের ঘাত-প্রতিঘাতের চেয়ে মানবমনের ভেতর সহস্রধারার যে অপরিসীম জগত- সে জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অনুরাগ, বিমূঢ়তা, সংঘাত সেই অন্তর্জগতের অমরাবতী নির্মাণ করার প্রয়াস নিতে চেয়েছে কামরুন নাহারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মন শ্যাওলার দেয়াল’। আর মন শ্যাওলার দেয়াল-এর হাত ধরে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং ক্রমাগত উত্তরণের বিউগল বাজবে বিশ্বমানের কবিতা সময়ের খোলা মাঠে; -অন্তরের শুভকামনা। শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক