কবি মাহমুদুল হাসান মাছুম, আমার পিতা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে আমাদের রেখে অসীম মহাশূন্যে হারিয়ে গেছেন। নশ্বর মানব সন্তান হিসেবে তাঁর মৃত্যু হলেও, কবি মাহমুদুল হাসান মাছুমের মৃত্যু হয়নি। কারণ, কবিরা বেঁচে থাকেন তাঁদের লেখায়, কবিতায় ও পাঠকের মননে। তাঁর অপ্রকাশিত দু’টো পাণ্ডুলিপির মধ্যে ‘ঔপনিবেশিক অন্ধকার’ অন্যতম। তাঁর রচনাগুলো পাঠক সমাজের কাছে পৌঁছে দেয়া সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ‘ঔপনিবেশিক অন্ধকার’- এর কবিতাগুলো হৃদয়ঙ্গম করতে বসে হারিয়ে যাই এক ভিন্ন জগতে। ‘ঔপনিবেশিক অন্ধকার’ স্পষ্ট করে কবির রাজনৈতিক দর্শন ও ইতিহাসকে দেখার সংবেদনশীল ভঙ্গি। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতা কবির জীবনবোধ, জীবনদর্শন, তাঁর ক্ষুরধার দৃষ্টিভঙ্গি, চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা, জীবনঘনিষ্ঠ ঘটনা, বাস্তবতা ও কল্পনার অদ্ভুত সংমিশ্রণে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কবির স্মৃতিবিজড়িত ছেলেবেলা, প্রকৃতি ও পাহাড় থেকে শুরু করে কবির পোষ্য বিড়াল ও খরগোশ, চেনা-অচেনা সমাজ, রাষ্ট্রকাঠামো, বঙ্গবন্ধু, রক্তক্ষয়ী ’৭১, গ্রীক মিথোলজি, সাম্প্রতিক ঘটনাসূমহ- মহামারী করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীর অসঙ্গতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন ছন্নছাড়া এবং বৈষয়িক বিষয়ে উদাসীন। প্রকৃতি ও প্রাণিপ্রেমী কবি তাঁর শেষ বয়স কাটিয়েছেন কবিতা লিখে। কবিতাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান, তাঁর আত্মা। তিনি পাঠকের মাঝে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন তাঁর লেখার মধ্যেদিয়ে। তাঁর লেখা ও রচনা পাঠকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পাঠকের ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। -তামান্না হাসান তনু