বাঙালি বিশ্বময় যত ছড়িয়ে পড়েছে, তার চিন্তা-দেখা-দৃষ্টিভঙ্গিও তত বিচিত্র ও বিস্তৃত হচ্ছে। আমাদের দেশপ্রেমহীন-লুটেরা-বণিকী রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির কারণে এই অভিজ্ঞতা ও অর্জনের সুফল জাতীয়ভাবে না পেলেও এর ছিটেফোঁটা সমাজ-সংস্কৃতিতে নানামাত্রিক প্রভাব রাখছে। বিশেষত প্রবাসী লেখকদের বহুরৈখিক রচনা সাম্প্রতিককালে আমাদের সাহিত্যে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। তাঁদেরই একজন অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী কথাসাহিত্যিক ইসহাক হাফিজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসপাড়ের সন্তান, দীর্ঘকাল ধরে বিদেশবাসী এই মানুষটি স্বদেশ-বিদেশের ভূগোলকে তাঁর সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রীয় বিষয় করে তুলেছেন। কিন্তু তাঁর হৃদয়-মননে প্রোথিত নদী-পলিময় বাংলা, এর ভাষা-সংস্কৃতি, বাঙালির জীবন-বাস্তবতা। তাঁর বর্তমান গল্পগ্রন্থ ‘অর্ধেক মানুষ’-এও তার সহৃদয়-সংরক্ত প্রকাশ রয়েছে। তাঁর ছোটগল্প আক্ষরিক অর্থেই ছোট, বিশেষত আকৃতি-প্রকৃতিতে। কিন্তু বিষয় ও বুনন, ভাষার প্রয়োগ, রসবোধ, তির্যকতা, অনুভূতিশীলতা, ঘটনা, অভিজ্ঞতা, দৃশ্য, পাত্রপাত্রী ও তাদের সংলাপে জীবনের বিস্তৃত-গহন নানা ক্যানভাস চিত্রায়িত হয়। তাঁর গল্পে রয়েছে মাদ্রাসাব্যবস্থার ভেতরবাস্তব, শৈশবের বঞ্চনা, প্রবাসের জীবনজটিলতা, শেকড়-হারাবার সংকট ও অন্তর্গত ভাঙন, দাম্পত্য মনস্তত্ত্ব¡, জীবনসংগ্রাম, মানুষের জটিলতা-কুটিলতা, হীনতা-ক্ষুদ্রতা, স্মৃতিকাতরতা, প্রেম ও যাতনার বিচিত্র আখ্যান। আর এই সব গল্পের আড়ালে এমন একজন লেখককে দেখি, যাঁর দেখার দৃষ্টি যেমন তীক্ষè ও তীব্র, তেমনি সাধারণ বিষয়কেও ভেতর থেকে তুলের আনার ক্ষেত্রে রয়েছে সহজাত দক্ষতা ও নির্মাণশৈলী। বিশ্বাস করি, আমাদের ডায়াসপোরা-সাহিত্যে ইসহাক হাফিজ তাঁর সৃষ্টির জন্য একটি গৌরবময় স্থান নিশ্চিতভাবেই অর্জন করে নেবেন।
ইসহাক হাফিজ। জন্ম ১৯৭৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের চান্দপুর গ্রামে। বাবা খতিব হাফিজুর রহমান। মা সৈয়দা নুরুন্নেছা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কাছাইট আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার শ্রীপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯১ সালে দাখিল পাস করেন। তারপর ভাদুঘর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে আলিম ১৯৯৩, ফাজিল ২০০০ এবং কামিল পাস করেন ২০০২ সালে। এর পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। আর ১৯৯৮ সালে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ পাস করেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা ল কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে এলএলবি সম্পন্ন করার পর ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিসও করেন কিছুদিন। অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি (সিডনি ক্যাম্পাস) থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস ল পাস করেন ২০০৫ সালে। বর্তমানে সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ল-এ অধ্যয়নরত। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।