প্রা ন্তি ক জ নে র গ ল্প ‘ইউসুফ শরীফ তাঁর গল্পে সমাজ, সময় আর ইতিহাসধৃত ব্যক্তি-মানুষের স্বরূপ অন্বেষার প্রয়াস পেয়েছেন। সে কারণেই তাঁর গল্পগুচ্ছে রাষ্ট্র-সংকটের উপস্থিতি এমন পৌনঃপুনিক। এমনকি ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা নিয়ে তাঁর লিখিত একাধিক গল্পে রাষ্ট্র-সংকটের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকেনি। ইউসুফ শরীফের কাছে সময় নিরপেক্ষ প্রেম-ঘৃণা- হতাশা-আশার যেমন মূল্য নেই, ব্যক্তি নিরপেক্ষ সময়ের সংকট-সমস্যা আন্দোলন-আলোড়ন দ্বিধা-দ্বন্দ¡ ও সত্যাসত্যও তেমনি গুরুত্বহীন। কোনো কোনো গল্পে দেখতে পাই ইউসুফ শরীফ মানুষের অন্তর্জীবন চেতনা ও বহির্জীবন চেতনার শিল্পিত-সমন¦য় ঘটিয়েছেন। আবার কোনো কোনো গল্পে তিনি ঘটনাকে প্রতিক্রিয়ায় রূপ দিয়েছেন এবং সেই প্রতিক্রিয়াজাত আবেগ-উত্তাপকে চিত্রে অঙ্কন করেছেন রসঢ়ৎবংংরড়হরংঃ শিল্পীদের মতো। পরিণামে তাঁর গল্প হয়ে উঠেছে ঘটনাবিমুখ অন্তর্চেতনা প্রবাহের শব্দরূপ। ইউসুফ শরীফের কয়েকটি গল্পে দেখা যায় প্রকৃতিও মধ্যবর্তী চরিত্রের পর্যায়ে উন্নীত। এসব গল্পের আত্মস্থ’ রচনাশৈলী তাঁর গল্পকে প্রায় কবিতার স্তরে উন্নীত করেছে, যেখানে মানুষ এবং প্রকৃতি প্রায় একাত্ম। মননধর্মী এবং মনোধর্মী দু’ধারার গল্পই তিনি লিখেছেন। সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদের দৃষ্টিতে মানুষ কালের পরিমাপে ত্রি-মাত্রা-যুক্ত অর্থাৎ যুগপৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতে প্রসারিত সামাজিক ব্যক্তি। ইউসুফ শরীফ তাঁর গল্পে এই মানুষেরই স্বরূপ অনে¦ষণ করেছেন। নিজের আশা- আকাক্সক্ষা উদ্যমেভরা এবং একই সঙ্গে বিনাশ ও বিকাশের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা যে মানুষ, সেই মানুষই ইউসুফ শরীফের গল্পের অনি¦ষ্ট। তবে বিশেষ কোনো মতবাদের প্রাবল্য তাঁর অনুভবের সততাকে নষ্ট কিংবা ম্লান করেনি। কোনো কোনো গল্পে বুদ্ধি-নির্ভর সমাজতান্ত্রিক চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।” - হেলাল আহমেদ কবি-সমালোচক-অধ্যাপক