মরার সাথে কেমনে জিতার শরীর জড়ায়া থাকে , শবের সাথে কি করে দ, এসব কিলবিল করছে এখন মাথা। দ অর্থটি কি? কলিম খান বলেছেন, দ- অর্থ দেওয়া। যেমন জল যে দেয়--জলদ। ফল দেয় যে ফলদ। শব দেয় যে শব্দ। তাহলে কী দেয়? অন্ন দেয়, জ্ঞান দেয়, বুদ্ধি দেয়, ধাক্কা দেয়, মার দেয়, আঘাত দেয়, গলা ধাক্কা দেয়, প্রবোধ দেয়, সান্ত্বনা দেয়, আনন্দ দেয়, সুখ দেয়, দুঃখ দেয়, প্রাণ দেয়... এবং কী দেয় না। দ মানে দাতা। শবকে প্রাণ দেয়। দাতা হলেন তিনি যিনি শব্দের শবকে বহন করেন তার নিজের প্রাণ শব্দকে প্রাণ দান করে। যিনি এই প্রাণবন্ত শব্দকে গ্রহণ করেন--তার প্রাণের সঙ্গে শব্দের ওই প্রাণটি মেশে। আরেকটি প্রাণের সৃষ্টি হয়। এভাবেই শব্দ নতুন করে বেঁচে ওঠে। এই প্রাণকে দান করে আরেকটি প্রাণের কাছে। এই যে শব তীখন হয়ে আকাশ ছুঁল ভাবি, আসলে আমার বাক-পাণি-উপস্থ ওই দূর 'দ' এর বহুক্ষণ- সে তো আমার কান ছুঁল কেবল, কিম্বা ভেতরে পদ্ম তারো ভেতরে প্রাণ, অথবা তুলসীহীন শপথের তাম্রকুণ্ডলিনী। যারে পাইলাম তার সাথে বসত না করে উগরে দিলে মহির্ষি জাবেদ আকতার বলছেন সেটা সংবাদ। শব্দটারে মগজে মথিত করলে, অন্দরেকন্দরে বসবাস করলে, গ্রানাইটের স্তুপের মতো তাতে মগ্ন থাকতে থাকতে তাপ্পর জবানী হয় কবিতা। আমার মনে হয় প্রতিটা শব্দ এক একটা বাড়ি, দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিমূর্ত চিত্রকলা, উপর্যুপরি ঝোপ আর লেলিহান উঁচু বৃক্ষের পড়শিদারি, মাঝে মাঝে একেকটা গাছ লকলকে লম্বা হয়ে গিয়ে আকাশে তালু মেলে ধরে... ফাঁকে ফাঁকে সদ্যোজাত নীল রঙ ছ্যাঁত করে এসে লাগে চোখে, কাছে যাওয়া অবধি অবশ্য পাঁচকুঁড়ি সম্পর্কিয়ানা, কিন্তু যত কাছে যাওয়া যায় তত তার স্পষ্ট হয় রূপ রেখা, আলো ছায়া। হাটতে থাকলাম ঐ বাড়ির দিকে, স্পষ্ট হবে গাছগাছলা, বাড়ির সীমানা, ঘরদোর। সদর গেট পেড়িয়ে উঠানের কোল-মাটিতে পা রাখলে শিরা দপদপিয়ে ওঠে, দেখা যাবে বাড়ির মানুষজন, তাদের সাথে আলাপ সালাপ করে ড্রইং রুম থেকেও বিদায় নিয়ে আসা যায়, কিন্তু প্রকৃত কবি হয় প্রেমিক, সে ভাল বাসবে, ঘনিষ্ঠ হবে আরও, জঙ্গল বুনবে, বেড রুমেও চলে যায় আস্তে আস্তে, ব্রহ্মাণ্ডের অপার থেকে সদাউৎসুক প্রাণেরা করে রহস্য বিনিময়, শুষে নেয় ইন্দ্রজালের প্রত্যেকটি অন্ধিসন্ধি, বাচ্চা কাচ্চাও নেয় তাপ্পর। সেসব ফুটফুটে শিশুরা ক্ষি সুন্দল! ক্ষি সুন্দল! আলী কইল কবি হইল শবের প্রেমে কানা, দেহের ভিতর দ করে জানাশোনা, এক দেহে বাস করে দুইজনা, আর অমাবস্যায় দিকজ্যোতিষ্কটি নড়েচড়ে বেড়ায় নদীর বুক জুড়ে-নদীর ওপারে পাথর পৃথিবী।