করোনা সংকটে নগরের কোলাহল থেমে যায় গতিহীন শুদ্ধতায়। মানবজাতি এক অপূর্ব মৈত্রিবন্ধনে জাত-পাত-দেশ-কাল-পাত্র-ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাস - সব গেছে তলিয়ে সুনামির তীব্রতায়। মানুষ প্রায় সবাই দাঁড়াবে ভেদাভেদ ভুলে এক জমিনে। মনে হচ্ছে অদ্ভুত অন্ধকার ঢেকে দেবে এই মানবতা। ব্যক্তি বাঁচে একাকী... গৃহ অন্তরীণ হয়ে। মৃত্যু মহামারির এই সংকটে বেড়েছে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। বেঁচে থাকার এই আকুতি নিয়ে আমরা সত্যকে উপলব্দধি করি। মানব সভ্যতা অনেক উদ্ভাবন আর আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মানুষ জয় করছে জীবন জীবিকার প্রতিটি ধাপে। মানুষের আয়ু বাড়ছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমছে আমাদের দেশে। আমরা যতটা এগিয়েছি জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, রাজনীতি-শিল্প-সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতিতে ঠিক একই ভাবে মুখোমুখী হচ্ছি নতুন নতুন অসুখ-বিসুখ আর ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার ভয়াবহ প্রকোপে। কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বের মানুষের সকল কর্মকান্ড স্তব্ধ করে মানুষে মানুষে স্থানিক দূরত্ব তৈরি করে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। স্বল্প কয়েক বছরের এই ব্যবস্থা সারা বিশ্বের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এক কঠিন সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। করোনাকালীন সময়ের কথা এখন মনে করতে গেলে আমাদের বিভীষিকাময় আতংক সৃষ্টি হয়। ভয়াল সেই সব স্মৃতি আমাদের মনকে গভীরভাবে নাড়া করে। করোনাকালীন মহামারির ভয়ানক স্মৃতিকে ফারাহ জাবীন শাম্মী রোজনামচার আকারে উপস্থাপন করেছেন কিন্তু একই সাথে সেই সময়কার সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং মানবিক বিষয়গুলোকে মনের গভীর থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন। প্রতিদিনের এই সব বিবরণ শুধু তথ্যবহুলই নয় বরং যে কোনো পাঠকের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাবে অতলে। এই বইয়ের বেশ কিছু অংশ আমি দ্রুত পড়েছি। কোনো কোনো ঘটনা আমাকেও কাঁদিয়েছে। ২১ জুলাই ২০২০ আমার স্ত্রী কোভিড আক্রান্ত হয়ে ৫২ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে সাহসের সাথে লড়েছেন কিন্তু চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা আর সেই সময়ে প্রাপ্ত ওষুধপত্র কোনো কিছুই তাঁকে বাঁচাতে পারেনি। কোভিড ১৯ ভাইরাসের করাল গ্রাসে বিশ্বে নেমে এসেছে মহামারি, অসহায় হয়েছে সারা বিশ্বের তাবৎ মানুষ, লাঞ্ছিত হয়েছে পুরো মানবতা। লেখিকা এই গ্রন্থে সময়কে যেভাবে দলিলবন্দী করেছেন তাতে ঘটনার বাস্তবতা এবং আকস্মিকতা যেমন: ঐতিহাসিক গুরত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। গ্রন্থকার ঠিক একইভাবে মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সমাজের রূঢ় অসহায়ত্ব এবং নানাবিধ সংকটকে শৈল্পিক বুননে উপস্থাপন করেছেন। আমরা এসবকিছু ভুলে আবার বাঁচতে শিখছি; স্মৃতি হাতরে মানবিক হওয়ার চেষ্টা করছি; আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে কঠিন বাস্তবতা থেকে নতুন কিছু আহরণ করার চেষ্টা করছি। বইটি আন্তরিক অনুভূতির সাবলিল প্রকাশ। সুলিখিত এই গ্রন্থটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে, এই প্রত্যাশা। বইটি সব ধরণের পাঠককে সমানভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ড. মো. গোলাম রহমান সম্পাদক আজকের পত্রিকা সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক (অব.) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফারাহ জাবিন শাম্মী সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা। মুক্তমনা আর স্বাধীনচেতা। মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর ডানা লেগেছিল কৈশোরে পা দিতেই। তখনই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে সাংবাদিক হবেন। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। পড়াশোনাটা শেষ করেই যোগ দিয়েছিলেন সাংবাদিকতা পেশায়। প্রথম সারির দুটো ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু নেশা তাঁর নতুন কিছু সৃষ্টির। ভালোবাসেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে। সৃষ্টির নেশা থেকেই ২০১১ সালে তাঁর উদ্যোগে ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘লুক’। অনেক চ্যালেঞ্জকে পেছনে ফেলে খুব অল্প সময়েই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে ‘লুক’। নিত্যনতুন কনটেন্ট ও বৈচিত্র্যে বাজারে প্রথম সারির ম্যাগাজিন হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে ‘রোকেয়ানামা’ নামে নারীদের জন্য একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই বিভিন্ন দৈনিকে ফিচার লিখতেন। সেই সময়টাতে শখের বশে করেছেন ফটোগ্রাফিও। আগাগোড়া সংবাদের মানুষ বলে লেখালেখির কাজটা করতেই হয়। বই প্রকাশের হাতেখড়ি 'করোনাপঞ্জি' দিয়ে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা নেত্রকোনা জেলায়। ভ্রমণের নেশাটা তাঁর অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। সুযোগ পেলে ঘুরে বেড়াবেন বিশ্বের নানা প্রান্তে।