মেহগনি বলে 'মেহগনি বনে' সনেটগুচ্ছের যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে, 'রেঙ্গুন সনেটগুচ্ছের ৩০টি সনেট-সিরিজের অর্কেস্ট্রায়, যাতে সংহত হয়ে উঠেছিল চয়ন খায়রুল হাবিবের আত্মাতা চিহ্নিত প্রবর্তনা, 'ভাঙ্গা লিরিক, ভাঙ্গা বয়ান'। চয়নের কবিতা এক বিস্ময়কর পূর্ণতায় ঋদ্ধ এখন। ও উনাদের ভাষা দখল করেছিল সেই ১৯৮৫তে। সিজোফ্রেনিকদের কল্পনা, এপিলেপটিকদের অতি চেতনা, অ্যাজমাগ্রস্তদের কষ্ট, ঢাকাই পথ-ফকিরদের ভিক্ষা-সঙ্গীত এসব দিয়ে ওর কবি প্রতিভার শুরু। ও মায়াকোভস্কির কবিতা পড়ত, ওলে সোয়িঙ্কার নাটক করত আর এসবের আত্মার ছায়া এসে পড়ত ওর কবিতায়। ছিল চাকমা জীবন, নিহত বঙ্গবন্ধু, ইউরোপীয় ক্যান্টো। বাংলা কবিতার প্রাকৃতিক নিসর্গের চাইতে ওর শ্বাসমূল যেতে চাচ্ছিল কৃত্রিম নিসর্গে। ও খুশি হচ্ছিল ওর আদি নিবাস ছোট্ট আজিমপুরের কবরস্থানের ভিখারিনীদের গান শুনে। ৯০এ স্বৈরাচার বিরোধীতায়. ও ছিল ওর কবিতা লেখার মতো করেই আন্দোলিত। আর তা ওকে নামিয়ে ছিল মিছিলে। তারপর ও চলে গেল নির্বাসনে। চলে গেল, কিন্তু জিপসীদের সাথে থাকল, থাকল এনার্কিস্টদের সাথে। সনেটগুচ্ছে চয়ন নিজেকে একটা মাপের মধ্যে খুঁজে পেতে চায়, হয়ত এটা চিত্রকর্মের শব্দজাত ফ্রেমে বা চলমান ক্যামেরার ১৬:৯ চোখে বা অন্য কোন বৌদ্ধিক গণনার অন্তপ্রেরণায়। সনেটগুলো কি সহজেই বেদনা লুকিয়ে ফেলে পথের দৃশ্যকল্পে, আনন্দ বিকিরণ করে চিন্তাকলায়, গৌরব ছড়িয়ে দেয় নামকরা বিদেশী পথ ও দায়িত্ববান সেতুতে। এই সনেটগুচ্ছ আর্তনাদে বৈশ্বিক ও অন্তস্থ রক্তসঞ্চারে বাংলাদেশের, ঢাকার, দেশি মানুষের। চয়ন তার ১৪ পংক্তির কবিতাসভায় সঙ্গীতের দোহাই বদলে গ্রহণ করেছে বাককৌশলের মহিমা। ব্যবহার করেছে দেহছন্দ যা উচ্চারণ মাত্র গমগম করে ওঠে রূপকল্প তৈরী করে। সমুদ্রতটে নিয়ে যায়, গুহায় নিয়ে যায়, প্রাচীন নগরে নিয়ে যায়। আবার ফিরিয়ে আনে।যেন সহজ কথার শক্ত প্রেরণা। ওর এই কবিতাগুলি মন্ত্র থেকে আসা, ইশারায় শক্তিমান। সংক্ষিপ্ত, ঘন ও জাগতিক।” প্রচ্ছদ : রশীদ আমিন আলোকচিত্র : জ্য ফিলিপ গিদাস