প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় প্রথম আলোতে। প্রথম গল্পেই বোদ্ধামহলের মনোযোগ কেড়ে নিতে সমর্থ হয়েছেন। কবিতা লিখতে লিখতে গল্প লেখা। কবি ও গল্পকার দুটোতেই সমান পরিচিতি। কবিতায় যেমন নিরীক্ষা প্রবণতা রয়েছে, গল্পের ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যাপার প্রযোজ্য। নির্মোহ থেকে তৈরি করেন গল্পের চরিত্র। ভাষার জগৎটি একান্তই তাঁর নিজস্ব, কারও সঙ্গে মেলে না। মধুর গদ্যের স্বাদে ব্যঞ্জনাপূর্ণ ভাষাচিত্র। পরিমিত জীবনবোধ, নতুন দৃষ্টিকোণ, সমকালীনতা, আধুনিকতা ইত্যাদি তার গল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পরাবাস্তববাদ, রহস্য, ছোট ছোট বাক্যের অন্তরঘেঁষা উচ্চারণ এসবকিছুর অনুষঙ্গে বাংলা গল্পের মূল স্রোতের দিকেই তাঁর যাত্রা। উঁচুতলার মানুষ থেকে নিচুতলার মানুষ অনায়াসে চলে আসে তাঁর কলমে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরিত্রগুলোই যেন নানা প্রেক্ষাপটে সমাজের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলে উঠে। ‘একজন জুতোর মানুষ’, ‘মাছপ্রেমিকা’ ‘সাপ’, ‘গর্ভপুরাণ অথবা জন্মের ইশতেহার’, ‘চোখ’, ‘রোহিঙ্গা’, ‘একজন নিখোঁজ কবি’, ‘খুনের গল্প’, ‘পদ্মপুরাণ’, ‘বারোতলা’, বাবার সেই পরিচিত হাসিটা’, ‘আগুনের নিজস্ব রং’, ‘দ্রৌপদী ও পঞ্চপাঞ্চবের অলিখিত জীবনীসহ’ প্রতিটি গল্প পড়লে মনে হবে চরিত্রগুলো আমাদেরই চেনা-জানা গণ্ডির। গল্পের বয়ানে আছে লেখকের নিজের প্রতি দায়বোধ ও সততা। এছাড়াও গল্পের কাঠামো নির্মাণে আছে লেখকের অনন্য কৌশল ও সুনিপুণতা, সমকালীন ও চিরন্তন বিষয়ের সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ বলে বারবার পাঠযোগ্য। জীবনযাপনের বিচিত্র যন্ত্রণা আর ভালোবাসার সমন্বয়ে নির্মিত এই অসামান্য গল্পগ্রন্থ ‘কুয়াশার হরিণ’! বাংলা গল্পের পাঠককে স্বাগত জানাই এই চমৎকার মনোলোকের গল্পের ভুবনে...