‘‘একদিন সব ছেড়ে ঘুমোতে যাব চিরতরে অপাঠ্য হয়ে থাকব তোমাদের চেনা কাগজের রঙিন মলাটের ভেতর! আমাদের প্রিয় মুহূর্তগুলো লেপ্টে দিও মুখোশের আড়ালে আকাশ ছেয়ে যাওয়া কালো মেঘের মতো।’’ কবি আমির হামজার সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। কবিকে দেখি সুকান্তের মতো। সুকান্তকে মোরগের কাহিনিতে দেখি, হিমালয় থেকে সুন্দরবন অব্দি তাঁকে অনুভব করি। কবি আমির হামজাকে সাত আসমান আর সাত সাগরের পশ্চিমপার থেকে দেখি, তাঁকে উপলব্ধি করি তাঁর কোমল প্রেমে। দেখি তাঁকে গভীরতর অভিমানে, প্রতিবাদে, ইবাদাতেু এবং কবিকে অনুভব করি তাঁর অসহায় নির্লিপ্ত নিরীক্ষণে, তাঁর কবিতার সঙ্গে আমিও সহমর্মী হই, উচ্ছিষ্ট গোলাপের উপেক্ষায় আমিও ব্যথিত হই। আমরা যারা নিজের পাড়া মহল্লা বা গ্রামগঞ্জের সামাজিকতাকে বিশ^সমাজের অংশ করে তুলতে চাই, আমাদের এই সুউচ্চ স্বপ্নগৃহের একজন বাসিন্দা কবি আমির হামজা। ‘শুক্কুরবারের কবিতা’ পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো আমি পরপর কয়েকবার পাঠ করেছি। প্রতি পাঠেই আমার নিজের দেশের দেহাতি মানুষের মুখগুলোকে যেন খুব নিকটে বসে দেখতে পাচ্ছি। আমির হামজার এই কাব্য যেন স্বচ্ছ এক জলাশয়; যে জলাশয়ে প্রতিবিম্বিত হয়েছে এই সময়ের বাংলাদেশ, এখানেই দেখতে পাচ্ছি তার মাতৃমুখ এবং জঠর—আর্তনাদ। তাঁর কবিতার নিমগ্ন শব্দালোকে দেখতে পাচ্ছিÑ ঊর্ধ্বমূল্যের ভাতবাজারে শুদ্ধ সজ্জন শ্রমজীবী মানুষের মৎস্যচক্ষু এবং মাথানত প্রেমী ও বিশ^াসীর নির্লিপ্ত মুখ। ‘‘হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে মিথ্যার সাইরেনে অহমিকার দরিয়ায় মাঝিবিহীন সাম্পান।’’ কবির এই কবিতা কেবল কবিতা নয়, বাণী। অকাট্য সত্য। কবি আমির হামজার এই আর্তবাণী থেকে মনে হয়, তাঁর শুক্কুরবারের কবিতা পাঠককে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য প্রাণিত করবে। মিথ্যে অহমিকা দ্রবীভূত হবে। পাঠক সত্য ও প্রকৃত প্রেমকে আশ্রয় করে নিজের জীবনকে নিত্যানন্দময় করে তোলার অনুপ্রেরণা পাবে। কবিকে অভিনন্দন। রবিশঙ্কর মৈত্রী প্যারিস, ফ্রান্স