সংকলন সম্পর্কে অন্য দুয়েকটি কথা। কবিতা-গ্রহণের বেলায় আমি আমার কাব্যগ্রন্থগুলির কয়েকটি কবিতা বাদ দিয়েছি। সাময়িক স্থগিত বা বহিস্করণ নয়, এই পরিবর্জনের কাজ আমি সচেতনভাবে এবং চিরদিনের জন্যই করেছি। ঐ ত্যাজ্যকৃত কবিতাগুলো তাদের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থেই থেকে যাবে-আর কোনোদিন অন্যত্র পত্রস্থ হবে না। এই ‘কবিতাসমগ্র’-এর সংযোজনায় আছে দুটো কবিতানাট্য। একটি বেশ সুপরিসর, অন্যটি নাতিদীর্ঘ। রচনাকাল ১৯৮৩ এবং ১৯৯০। ‘লালচোখ’ মুদ্রিত হয়েছিল কবি মুস্তফা আনোয়ারের লিটল ম্যাগাজিন ‘সিদ্ধার্থ’ এবং ‘সুন্দর’ আমার নিজের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘শিল্পতরু’র ঈদসংখ্যা ১৯৯০-এ। ইতিমধ্যে প্রকাশিত আমার কোনো কাব্যগ্রন্থে এই কাব্যনাট্যদ্বয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে ১৯৯১-এ প্রকাশিত ‘আবিদ আজাদের কবিতা’য় সংযুক্ত করে দিয়েছিলাম। এবার, ‘কবিতাসমগ্র’-এও এদের স্থায়ীভাবে গ্রন্থস্থ করে রাখা হলো। ভবিষ্যতের আর কোনো স্বতন্ত্র কাব্যসংকলনেই মুদ্রিত হবে না এগুলো। আর, প্রুফ সংশোধনীর সময আমি যৎসামান্য পরিবর্তন করেছি কোনো কোনো কবিতার। কাজেই, আগ্রহী পাঠকের কাছে পূর্বজ কাব্যগ্রন্থের দুয়েকটি কবিতার সঙ্গে বর্তমান সংকলনভুক্ত সেইসব কবিতার ঈষৎ পরিবর্তন ধরা পড়বেই। এছাড়া, আপাতপূর্ণাঙ্গরূপ নিয়ে পাঠক, সমালোচক এবং সুহৃদ কবিতাপ্রেমীদের কাছে হাতেনাতে ধরা-পড়ার সব লজ্জা, সব ভয় এবং সকল আনুষঙ্গিক ত্রুটির দায়দায়িত্ব আমি আমার নিজের কাঁধেই রাখছি।
আবিদ আজাদ ১৯৫২ সালের ১৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের চিকনির চর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় আজিমউদ্দিন হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্নাতক লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পেশা: সাংবাদিকতা ও প্রকাশনা ব্যবসা। 'ঘাসের ঘটনা' (১৯৭৬) তাঁর প্রথম কাব্য। এরপর বেরিয়েছে আরো চৌদ্দটি কাব্য। কবিতার পাশাপাশি তিনি উপন্যাসসহ নানা ধরনের গদ্য লিখেছেন। উপন্যাসের সংখ্যা পাঁচটি, আত্মস্মৃতি একটি। তিনি 'শিল্পতরু' নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এছাড়াও তাঁর কয়েকটি কাব্যনাটক ও বেতার-টিভি নাটক রয়েছে। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৭৬), চারণ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), মাইকেল মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার, সা'দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮)। দেশ-বিদেশের পদক-সম্মাননাও পেয়েছেন বেশ কয়েকটি। আবিদ আজাদের প্রয়াণ ঘটে ২০০৫ সালের ২২ মার্চ।