অনুবাদকের আরয সকল প্রশংসা সমস্ত জগতের অধিপতি, যিনি ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই, সেই আল্লাহ তা'আলার। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক, সকল নবী ও রাসূলের ইমাম, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর প্রতি তথা যিনি তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন এবং তাঁর বংশধর ও সাহাবাদের প্রতি, যাঁরা এই তাওহীদকে বাস্তবায়ন ও এর উপর অটল থাকার জন্য কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করেছেন এবং নিজেদের মূল্যবান জীবনকে ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেছেন। প্রিয় পাঠক! তাওহীদ অর্থ যাবতীয় বাতিল মাবুদ-উপাস্যকে অস্বীকার করে আল্লাহকে তাঁর হকসমূহে একক হওয়ার স্বীকৃতিও সাব্যস্ত করা বুঝায়। বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, অথচ বর্তমান সমাজ ইসলামের অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্ব দিলেও এ বিষয়টি সম্পর্কে সর্বাধিক উদাসীন। প্রত্যেক নবী-রাসূলই অন্য যে কোন ইবাদত, আমল ও কর্মসূচীর পূর্বে তাওহীদকে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা তাওহীদের পরিপন্থী শিরকের সাথে কখনো আপোষ করেননি। তাই আজও নবীদের ওয়ারিস তথা উত্তরসূরি আলেম, ইমাম-খতীব, বক্তা, সংস্থা-সংগঠন, জামাত ও দলের অপরিহার্য দায়িত্ব হলো, দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে তাওহীদকে অগ্রাধিকার ও সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। অতএব এ অসাধারণ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ বিন শামী বিন মাতাঈন শায়বাহ তাওহীদের মূল অংশ ইবাদতের তাওহীদ কেন্দ্রিক একটি অমূল্য বই সংকলন করেন এবং তিনি বইটির নাম দেন “কিতাব তাওহীদুল ইবাদাহ” যার বাংলা নামকরণ করা হলো “তাওহীদুল ইবাদাহ—একমাত্র আল্লাহর ইবাদত : তাৎপর্য ও বিশ্লেষণ।” প্রিয় পাঠক! তাওহীদের বা আল্লাহকে একক বিশ্বাস করার রয়েছে তিনটি ক্ষেত্র বা বিষয়- যে তিন বিষয়ের প্রত্যেকটিতে আল্লাহকে একক বিশ্বাস ও সেগুলোতে একক সাব্যস্ত করা জরুরী : প্রথমঃ আল্লাহর কর্মসমূহে আল্লাহকে একক বিশ্বাস ও সাব্যস্ত করণ। যেমনঃ তিনিই একক প্রতিপালক, স্ৰষ্টা, মালিক ইত্যাদি। দ্বিতীয়ঃ বান্দার ইবাদত-আমলে আল্লাহকে একক বিশ্বাস ও একক সাব্যস্ত করণ। যেমন নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ্বের ক্ষেত্রে, অনুরূপ দোয়া- প্রার্থনা, আহ্বান, সাহায্য প্রার্থনা, আশ্রয় প্রার্থনা, জবাই, আশা, ভরসা ইত্যাদিতে তাঁকে একক সাব্যস্ত করণ। তৃতীয়ঃ কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর যে নাম ও গুণাবলী রয়েছে তাতে সৃষ্টির সাথে কোন সাদৃশ্য জ্ঞান, সৃষ্টির সাথে তুলনা, অর্থের অপব্যাখ্যা, কোন ধরণ পোষণ করা ব্যতীতই শব্দ ও মর্মের উপর বিশ্বাস পোষণ ও সাব্যস্ত করা। তবে উক্ত তিন বিষয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মূল বিষয় হলো দ্বিতীয়টি অর্থাৎ ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদ। আর এ বিষয়টিরই বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ অনূদিত বইটির লিখক প্রদান করেন এ বইটিতে, যা সত্যিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। কেননা মূল এ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন ও তাঁদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এর ভিত্তিতেই জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা করবেন। অন্য বিষয়ের তাওহীদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কাফের-মুশরিকদের পুরাপুরি দ্বন্দ্ব না থাকলেও মূল দ্বন্দ্ব ছিল ইবাদতের তাওহীদের সাথে। যা আৰু জাহাল, আবূ লাহাবসহ মক্কার মুশরিকরা মেনে নিতে পারেনি। রিয়াদস্থ পশ্চিম দ্বীরা ইসলামী সেন্টার কর্তৃপক্ষ এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেই বইটি অনুবাদ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর আমি বইটি অনুবাদ করার সৌভাগ্য অর্জন করি। এ জন্যে আমি প্রথমে আল্লাহর নিকট জানাই অসংখ্য ও খালেস কৃতজ্ঞতা। তারপর কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের ইসলামী সেন্টার কর্তৃপক্ষের এবং আরো কৃতজ্ঞতা জানাই শায়খ মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াসে'র যিনি শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও বহু পরিশ্রম করে বইটির বর্ণ বিন্যাসের দায়িত্ব পালন করেন। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি পশ্চিম বঙ্গের শায়খ মুকাম্মেল ভাইয়ের যিনি ব্যস্ততা সত্ত্বেও বইটির প্রুফ দেখে দেন। এ ছাড়াও যাঁরা যেভাবে বইটি প্রকাশ করায় সহযোগিতা করেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যেহেতু নিশ্চয়ই আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই অতএব বলবো না যে, বইটিতে যদি ভুল থাকে, বরং বলি যে, বইটিতে অনুবাদে পাঠকের ও বিজ্ঞজনদের নজরে যে সব ভুল ধরা পড়ে তা আমাকে জানিয়ে উপকৃত করবেন। এ বিষয়ে আমাদের ভাষায় এ ধরণের বই অতি বিরল মনে করি। অতএব বইটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইসলামিক সেন্টারগুলোর ইসলামী শিক্ষা কোর্সের সিলেবাস হিসেবে গ্রহীত হলে সঠিক আকীদা প্রচার ও প্রসারে বড় ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে আল্লাহর নিকট দোয়া করি তিনি যেন বইটিকে আমাদের সবার জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন-আমীন। নিবেদক সবার দোয়া প্রার্থী মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান