ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর উপন্যাস কক্সবাজার সর্বার্থে একটি আধুনিক উপন্যাস। এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু একুশ শতকের আধুনিক মানুষের চিন্তাভাবনা ও আচার-আচরণ । এর জন্য লেখক বেছে নিয়েছেন সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার, যেখানে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পরিচয় অবশ্যম্ভাবী। সাধারণত দেখা যায় পর্যটক মানুষের মানসিক ট্যাবু, ইনহিবিশন সবই কিছুটা স্খলিত। এখানেও খুব একটা ব্যতিক্রম নেই। এ গল্পে বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ আছে কিন্তু কোনো জাদুবাস্তবতা নেই। নেই আধিভৌতিকতা বা মানুষের চিন্তাপ্রবাহ। বর্ণনার বদলে লেখক সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যাতে অল্প পরিসরেই অনেক কথা বলা হয়ে যায়। কোনো আদর্শবাদের প্রচার নেই। লেখকের নৈতিক কোনো পক্ষপাত নেই। লেখক অনেকগুলো চরিত্রকে কক্সবাজারে নামিয়ে দিয়েছেন। কেউ স্থানীয়, কেউ পর্যটক। তাদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের অবয়ব গড়ে উঠেছে। এ উপন্যাসে কোনো প্লট নেই যেমন থাকে ক্ল্যাসিক উপন্যাসে। প্রচলিত অর্থে কোনো নায়ক নেই । ইফতেখারকে প্রধান চরিত্র বলা যায় যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কিছুদিনের জন্য কক্সবাজারে এসেছে যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙ-এর তার দেখা পেতে। অল্প পরিসরে নানা আকর্ষণীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে পাঠক যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন তা একদিকে মনোগ্রাহী, অন্যদিকে রোমাঞ্চকর।
জন্ম: ৩ জুন, ১৯৫৯, বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ও সাহিত্যিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও, তিনি অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও অপারেশানস্ও বিজনেস রিসার্চ ইত্যাদি বিষয়ের অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ১৯৮১ স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৯৭ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কিছু সময়ের জন্য পাবলিক পলিসি অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচ) যোগ দেন। অতঃপর সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও আংকটাডের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি কূটনৈতিক পদে বেলজিয়াম, সুইজারল্যাণ্ড ও লুক্সেমবুর্গ এ দায়িত্ব পাল করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কার্যরত রয়েছেন। সাহিত্য গবেষণা তাঁর প্রিয় ক্ষেত্র। তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ও অন্যান্য রচনা নিয়ে প্রায় তিন দশক যাবৎ গবেষণা করে চলেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি জীবনানন্দ দাশের স্বহস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের সঠিক পাঠ নিরূপণ করেছেন। বিশেষ করে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের বর্জিত অংশ পুনরূদ্ধার করেছেন ও সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত শব্দাবলী বর্জন করে বিশুদ্ধ পাঠ তৈরী করেছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণা প্রতিবেদন ‘চটি সাহিত্যের পূর্ব পশ্চিম’। বর্তমানে তিনি বাংলা সাহিত্যের অভিধানে অসংকলিত শব্দ নিয়ে গবেষণা করছেন।