হাবিবুর রহমান খান। একজন শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার অপরাধে তার রাজাকার ছোটভাইয়ের সাগরেদরা হাবিবুর রহমানের স্ত্রীকে তুলে দেয় পাকিস্তানি মিলিটারিদের হাতে। দুদিন পর তার স্ত্রী হেলেন আহত, রক্তাক্ত অবস্থায় পালিয়ে আসেন সেনাক্যাম্প থেকে। কিন্তু সমাজ তাকে অপমানে, বিদ্রুপে অতিষ্ঠ করে তোলে। কিছুদিন পর তার সন্তান সম্ভাবনা দেখা দিলে আরো দূর্বিষহ হয়ে ওঠে তার জীবন। স্ত্রীকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেকে এই সন্তানের বাবা বলে ঘোষণা দেন হাবিবুর রহমান। এরমধ্যেই যুদ্ধ চলাকালে একদিন এক পাকসেনাকে হত্যার মুহূর্তে তার প্রাণভিক্ষার তীব্র আকুতিতে বিহ্বল হয়ে যিনি যুদ্ধের নিয়ম ভুলে সিন্ধান্ত নেন লোকটিকে ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাত মস্তিষ্ক থেকে লোকটাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসার আগেই সেই পাকসেনার বুকে বসিয়ে দেয় ধারালো ছুরির ফলা। লোকটার বিস্ফারিত চোখ আর বুক থেকে বেরিয়ে আসা তাজা রক্তের স্রোত হাবিবুর রহমানকে হতবুদ্ধি করে দেয়। মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। তার এই বিপর্যয়ের সুযোগ নেন তার ছোটভাই মুজতবা খান। এতদিন এলাকার অবস্থাপন্ন হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে তাদের দেশ ছাড়া করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেন মিলিটারিদের হাতে। কিন্তু চতুর মুজতবা খান নভেম্বরের শেষে এসে মুক্তিবাহিনীর বিজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর গর্ভে জন্ম হয় তিতলির। যে মূলত এক যুদ্ধশিশু। হাবিবুর রহমানের সন্তান তরুণ আর তিতলিকে সরকারি অনাথাশ্রমে রেখে আসেন। দখল করে নেন ভাইয়ের সব সম্পত্তি। সমাজে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে পরিচিতি পান তিনি, তার সন্তানরা বাগিয়ে নেয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকুরি। অন্যদিকে শেকলবন্দি অমানবিক এক জীবন কাটিয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান হাবিবুর রহমান। তার সন্তানেরা বড় হয় অনাদর, অবহেলায়। তাদের জীবনযুদ্ধ ঘিরে তৈরি হয় আলাদা বলয়, ভিন্ন গল্প। আলোচ্য উপন্যাসে সে গল্পই উঠে এসেছে বিস্তৃত পরিসরে।