নিরপরাধ ঘুম বইয়ের ছয়টি গল্পে নানা বৈচিত্র্য আছে, কিন্তু একদিক থেকে তারা সগোত্র গল্পের ভাষা এখানে দারুণ সপ্রতিভ। এ ভাষায় কবিত্ব আছে, এবং সে কবিত্বে গদ্যের পরিমিতি আছে। সুমন রহমান গল্প লিখেছেন পরিচয়ের গভীর থেকে, উপলব্ধির নির্যাস মেখে আর উপলব্ধির জন্য হাত বাড়িয়েছেন নিজের যাপনের মধ্য দিয়ে অর্জিত জ্ঞানের দিকে। গল্প তিনি বলেন, কিন্তু এড়িয়ে চলেন কাহিনি; জীবনভাষ্য প্রণয়নই তাঁর লক্ষ্য । গল্পগুলোতে বাংলাদেশ আছে। সংবাদভাষ্য তাঁর কয়েকটি গল্পের আরম্ভবিন্দু। কুশলী হাতে সুমন সেই আরম্ভবিন্দু থেকে পেছনে গেছেন, একের পর এক ক্রমক্ষীয়মাণ আলোকিত অঞ্চল পেরিয়ে আমাদের নিয়ে গেছেন কুয়াশাঢাকা প্রান্তরে— প্রায়শই সংবাদভাষ্যের পরিচিত আলোর বিপরীতে স্বরাট দাঁড়িয়ে গেছেন অভাবিত অন্য কোনো আলো হাতে। এই যাত্রাপথে দুটি ঘটনা ঘটেছে বারবার। একদিকে দাঁতাল রাষ্ট্র ও সমাজ এবং প্রগলভ নাগরিকতা প্রকাশের রেটরিক তাঁর সঙ্গী হয়েছে, অন্যদিকে প্রভাবশালী ভাববলয়ের বিপরীতে তাঁকে প্রায়শই দাঁড়াতে হয়েছে নিষ্পেষিত ব্যক্তির পক্ষে। সামষ্টিক কাঠামোর আয়োজন ক্ষুণ্ন না করে সমষ্টির মূর্ত-বিমূর্ত কাঁটায় জর্জরিত ব্যক্তিকে আবিষ্কার করতে পারাই কয়েকটি গল্পের অমিত সাফল্যের উৎস। ‘নিরপরাধ ঘুম’ গল্পে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিবরণী সুমন ছড়িয়ে দেন শহরের গলিপথে। আর ‘সুপারহিরো পরিবারে একটা খুব অর্ডিনারী পাতাঝরা দিন' গল্পের লেখক নিজেই হয়ে উঠেন সুপারহিরো‘অস্বাভাবিক কিশোরের স্বাভাবিক দিনগুলোতে যৌনতাকে ইঙ্গিতময় প্রকাশ্যতা দিয়ে হয়ে উঠেন। শৈল্পিক সাহসের সমাচার।
সুমন রহমান-এর জন্ম ১৯৭০ সালে কিশােরগঞ্জ জেলার ভৈরবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দক্ষিণ এশীয় অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে। সর্বশেষ পিএইচডি করেছেন সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস। বাংলাদেশের গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিষয়ের অধ্যাপক। সাহিত্যের সব শাখাতেই সমানভাবে স্বচ্ছন্দ সুমন রহমান। দুটো কবিতাগ্রন্থ, দুটো গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে তার। ছােটগল্প “নিরপরাধ ঘুম” এর জন্য ২০১৬ সালে কমনওয়েলথ ছােটগল্প পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছিল তার নাম। “নিরপরাধ ঘুম” গল্পগ্রন্থটি ২০১৯ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই পুরষ্কার পায়।