ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৌতুকলেখক ক্যানাডিয়ান অধ্যাপক স্টিফেন লিকক(১৮৬৯-১৯৪৪) তাঁর হিউমার অ্যাজ আই সি ইট’ শিরোনামাঙ্কিত প্রবন্ধটিতে কৌতুকের মর্মকথাটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে কৌতুরস বর্তমান সভ্যতার মহত্তম সৃষ্টি। মানুষের গভরতর অন্তর্লোক বিচিত্রমুখী অসঙ্গতির দ্বন্দ্বকে আগ্রয় করে তার হাসি ও অশ্রুমিশ্রিত এক অপরূপ রসনিষ্পত্তি ঘটিয়ে থাকে। তাই মার্ক টোয়েইন-এর ‘হক্লব্যারি ফিন’ কান্ট-এর ‘ক্রিটিক অফ পিওর রিজন’-এর চেয়ে মহত্তর। অলঙ্কারশাস্ত্রীয় অতিশয়োক্তিটি বক্তব্য জোরালো করার জন্য। এ যুগের সাহিত্যে তাই কৌতুকের একটা সূক্ষ্ম সৌকুমার্য এবং রুচির একটা সুশোভন ওজন বর্তেছে। এর উপস্থাপনায়ও হাস্যকে যথাসম্ভব সুস্মিত রাখাই শীর্ষ শ্রেণীর হাস্যকৌতুকঋদ্ধ কথাশিল্পীর কলারীতি। সেই রীতিরই একজন শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি আবদুশ শাকুর। বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি শাকুরের হাস্যরসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য:‘........ এই হাস্যজ্যেতির সংস্পর্শে কোনো বিষয়ের গভীরতার গৌরব হ্রাস হয় না, কেবল তাহার সৌন্দর্য রমণীয়তার বৃদ্ধি হয়, তাহার সর্বাংশের প্রাণ এবং গতি যেন সুস্পষ্টরূপে দীপ্যমান হইয়া উঠে।’ পরশুরামের প্রসন্ন হাস্যরস, বঙ্কিমচন্দ্রের বিষণ্ন হাস্যরস, ত্রৈলোক্যনাথের হৃদয়বৃত্তি, প্রমথ চৌধুরীর বুদ্ধিবৃত্তি ইত্যাদি অনেক উপাদানেরই মিশেল থাকলেও শাকুরের রচনার শ্রেষ্ঠ সম্পদ তাঁর ব্যাপক ও গভীর চিন্তার জগৎ। তবে তাঁর হাস্যরস হিউমারের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ উইটে। শাকুরের মতে উইট হচ্চে হিউমারের উন্নয়নের উপাদান, যা বুদ্ধিঋদ্ধ বৈদগ্ধ্যসরূপে প্রাণবন্ত হাস্যরসের শক্তিসঞ্চারী জ্ঞাতি। অর্থাৎ হিউমার যদি হয় মানসিক অবস্থা, উইট তবে মানসিক শক্তি। হিউমার যদি বিশেষ, উইট তবে নির্বিশেষ। এই নির্বিশেষের পরশেই নেহাত জীবনানুসৃতি হয়ে উঠে মহৎ এক শিল্পকৃতি। সে-সূত্রে আবদুশ শাকুর রম্য রচনার একজন মহৎ শিল্পী। এখানে গ্রন্থিত কড়চানিচয় তাঁর শ্রেষ্ঠ রম্য রচনা থেকে নির্বাচিত। সূচিপত্র *আরেক পা *করিবকর্মা *নথির গতি *সত্যাগ্রহী *বড়শি *দিলবদল *অশুভ সঙ্কেত *প্রকাশের প্রমাদ *মুখসমচার *প্রেরিত পুরুষ *যন্ত্রস্থ যাত্রা *মশা ও মহাশয়া *গণনীতি *উল্লষ্ফন *স্নেহাশিস *লিচুকাহিনী *আগন্তুক *বিচিত্র ব্যাধি *ডাকাত ও সম্রাট *টানা-পড়েন *গড্ডলিকা গাথা *অভিনয় নয় *কর্মসংস্কৃতি *সুখসমাচার *মধ্যচিত্ত *হরিশে বিষাদ *বিনিপয়সার ভোজ *বেচারি রেফারি *কুহকিনী *হায় সপ্তাহান্ত *পেলে এবং প্লেটো *আত্মরতি *দোষীর ঈদ *প্রতিরক্ষা কবচ *কপালের কথা
আবদুশ শাকুর : জন্ম ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নােয়াখালী জেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ, হল্যান্ডের আই.এস.এস থেকে অর্থনীতিতে এম.এস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে যােগদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ। পড়াশােনা করেন বিবিধ বিষয়ে এবং নানান ভাষায় লেখালেখির বিষয় কথাসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, সংগীত, সমাজতত্ত্ব ও নিসর্গ। লেখেন ঢাকার অভিজাত সকল পত্র-পত্রিকায় এবং কলকাতার বিশিষ্ট মাসিক শহর একুশ শতক’ ও ‘মিলেমিশে’ ইত্যাদিতে। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী এবং সঙ্গীত সংবিৎ শিল্পকলা একাডেমী। বাকি গ্রন্থাবলির প্রকাশক ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, ও রােদেলা এবং কলকাতার দীপ প্রকাশন, প্রতিভাস ও একুশ শতক || আবদুশ শাকুর ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী। অ্যাওয়ার্ড' পান ছােটগল্পের জন্য। গল্পসমগ্র'র জন্য পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে ‘অমিয়ভূষণ পুরস্কার’ পান ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার পান মননশীল প্রবন্ধগ্রন্থ ‘গােলাপসংগ্রহ’র জন্য। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য ২০০৯ সালে পান ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার' এবং ২০১১ সালে ‘শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।