'বসন্তকালের ভালোবাসা' এটি একটি সামাজিক উপন্যাস। এই উপন্যাসের সময়কাল নব্বই দশকের মাঝামাঝি। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র জয়নব বেগম ও গোফরান হাওলাদার, বকুল মিয়া ও জহুরা বিবি। জয়নব গোফরান দু'জনই অসমবয়সী এবং সামাজিক সম্পর্কেও বিষম। এই উপন্যাসের নায়িকা জয়নব বেগম। স্বাস্থবতী, শ্যামলা বর্ণের, লাজুক, সংসারী জয়নব বেগম স্বামী বকুল মিয়ার সাথে তিন বছর সংসার করেও মা হতে পারেনি। বকুল মিয়া নিরক্ষর, রাগী মানুষ। কামলা কৃষাণ দিয়ে কোন মতে জীবন চালাচ্ছে। বিয়ের তিনবছর পরও বাপ হতে না পারা তার জন্যও বিরাট লজ্জার ব্যাপার। গ্রামের মানুষের কাছে, আত্মীয় স্বজনদের কাছে সে মুখ দেখাতে পারছে না। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে কলহ, ঝগড়া, ও নিত্য ঝগড়া এবং মারামারি। সে জয়নব বেগকে কবিরাজি ফকিরি চিকিৎসা করালেও কোন ফল হয়নি। দুর্ভিক্ষের সময় অভাব অতটা আঘাত না করলেও পরে তাদের ভাইদের সংসার বড় হওয়ার ফলে অভাব অনটন হানা দিতে থাকলে তারাও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সেও জীবম বাঁচানোর জন্য বউকে চাচাত চাচা গোফরান (হাওলাদারের) মাতুব্বরের বাড়িতে রেখে পদ্মার ওপাড়ে চলে যায়। গোবিনপুরে এক মাসের জন্য কামলা, কৃষানের কাজ করতে গিয়ে বকুল মিয়া ও তার দল দুইমাস থেকে যায়। পঞ্চাশোর্ধ গোফরান অনেক জমিজমা, টাকা পয়সার মালিক। তার বউ সুন্দরী জহুরা বিবি চল্লিশেই সাতটা সন্তানের মা হয়ে অকালেই বুড়ি হয়ে গেছে। গোফরানের বাড়িতে জয়নব মন দিয়ে কাজ করতে থাকে। কয়দিন ধরে তাকে কাছ থেকে দেখে কামনার আগুনে জ্বলে ওঠে গোফরান মাতুব্বর। এত সুন্দর গড়ন, দেহবল্লরীর নারী সে জীবনে কমই দেখেছে। জয়নবকে কাছে পেতেই হবে যে কোন মূল্যে। গ্রামে যাত্রা পালা শুরু হলে একরাতে সুযোগ সেও ঝুঁকি নিয়ে ঢুকে পড়ে জয়নবের ঘরে। তেইশোর্ধ উবর্ষী জয়নব নিজেকে কোনভাবেই গোফরানের হাত থেকে বাঁচতে পারে না। দুইমাস বাধ্যহয়েই গোফরানের বাড়িতে থাকতে জয়নবকে। দেড়মাস পরেই জয়নব টেরপায় সে মা হতে যাচ্ছে তাদের গোপন সম্পর্ক টের পেয়ে যায় গোফরানের বউ জহুরা বিবি গোফরানকে হাতনাতে ধরে ফেলে জহুরা বিবি। এরপর স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়ার একপর্যায়ে খোফরান। জহুরা বিবিকে মারপিট করলে জিদ করে জহুরা বিবি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুমের মধ্যেই সে ব্রেনস্ট্রোক করে এবং শরীরের একপাশ চিরতরে অবশ হয়ে যায়। এই ঘটনায় জয়নব অনুশোচনায় ভুগত থাকে এবং সে গোফরানের দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বকুলের অভাবের সংসারেই ফিরে আসে। জয়নব চলে আসার পর গোফরানের মন মেজাজ বিগড়ে যায় এবং সেই রাতেই সে চলে আসে জয়নবের বাড়িতে এবং জয়নবের ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে থাকে। জয়নবকে জাগানোর জন্য ঘরের জানালার কাছে এসে তাকে জাগানোর চেষ্টা করতে থাকে, এই সময়ই গোখরা সাপের দংশনের শিকার হয় গোফরান। সাপের কামড় খেয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে গোফরান কিন্তু পারে না। কোন মতে নিজের বাড়ির সামনে এসে বাঁশের বেঞ্চিতে শুয়ে পড়ে এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।