এই বইটি সমকালীন আফগান নারীদের কবিতা প্রকাশ করে। তবে পরিধি সংকীর্ণ। ২০০১ থেকে পরবর্তী বা তালেবান-উত্তর প্রকাশিত একাধিক সমকালীন হেরাতি নারী কবিদের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আফগানিস্তানের নারীদের জন্য পড়া ও লেখার মতো কার্যকলাপের উপর তালেবান শাসনের বিধিনিষেধের ফলে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে নারী কবিদের প্রকাশিত রচনায় কিছুটা ‘ব্ল্যাকআউট’ বা ‘নিষ্প্রদীপন’ দেখা যায়। অবশ্যই নারীরা তখনও কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তাদের কাজগুলো প্রকাশ করা কার্যতভাবে অসম্ভব ছিলো। একটি অতি-রক্ষণশীল ও বৈষম্যমূলক শাসনের দ্বারা নারীদেরকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন করায় (বর্তমান তালেবানদের অধীনে যা এখন আবার বিদ্যমান) নাদিয়া আঞ্জুমান ও তার সহযোগীদের মতো অনেকেই গোপনে তাদের শিক্ষা গ্রহণের আশ্রয় নেন। অনেকে ছোটোগল্প ও কবিতাসহ চিন্তাশীল উচ্চ মানের লেখা তৈরি করেছেন। নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করেছেন গোপন কর্মশালায় অনানুষ্ঠানিকভাবে জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে। দুর্ভাগ্যবশত, এই সময়ের মধ্যে লেখা বেশিরভাগ কাজ প্রকাশিত হয়নি। যেখানে তালেবান আমলে পুরুষদের জন্যই শৈল্পিক ও প্রকাশনার পরিবেশ ছিলো খুব সীমাবদ্ধ। সেখানে নারীদের ক্ষেত্র আরও বেশি সীমাবদ্ধ ছিলো। আর ঠিক সে জন্যই তালেবান-পরবর্তী নারীদের লেখাগুলো বিশেষভাবে মূল্যবান। যেসব বছরগুলোতে তাদেরকে বাড়িতে ‘বন্দী’ করে রাখা হয়েছিলো, আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় বাধাগ্রস্থ করা হয়েছিলো ও পরবর্তীতে কী হবে সে সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির উন্মোচিত জানালা সেগুলো। ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞার পর নারীর সৃজনশীল সর্বজনীন প্রকাশের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে কবিতা ও অন্যান্য শৈল্পিক কাঠামোর আকষ্মিক পুনঃস্থাপন এই দশকে বা তার পরে সৃষ্ট কাজের অধ্যয়নকে বিশেষভাবে অর্থবহ করে তোলে। হেরাতি নারীদের কবিতা লেখা হয় তালেবান যুগে কিন্তু প্রকাশিত হয় পরে। যেমন নাদিয়া আঞ্জুমানের বেশ কিছু লেখা যেগুলো এখনও এই বইয়ের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত। আফগানিস্তানে নারীদের লেখা অধ্যয়ন করাও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ যারা সৃজনশীল কাজকে লেখা ও প্রকাশ করার জন্য বেছে নেন তাদের জন্য রয়ে গেছে বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর সেসব কাজ নিজেই ব্যক্তিগত সংগ্রামের পাশাপাশি বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সাথে জড়িত। নাদিয়া আঞ্জুমানের কাহিনী, একজন তরুণ নারী কবি হেরাতের শহুরে পরিবেশের একটি শিক্ষিত ও সহায়ক পরিবাওে থেকেও যে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিলো তার গভীর উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। যখন তার জনগণ ২০০১ সাল থেকে জাতি হিসেবে নিজেদেরকে পুনরুদ্ধারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। যখন আফগানিস্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় ভরা। কারণ জনগণ একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের বৈশিষ্ট্যযুক্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি নিয়ন্ত্রণকর্তার আবহাওয়ার মধ্যে রয়েছে। উন্নয়ন তহবিল হ্রাসসহ আন্তর্জাতিক সামরিক সহায়তা হ্রাস, ২০১৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরাজয় পুনরুদ্ধার আর বিদ্রোহীদের সাথে সম্ভাব্য আলোচনা সবকিছুই আফগান সমাজে নারীদের অবস্থার উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। তালেবান-পরবর্তী সময়ে হেরাতি নারীদের কবিতায় আবেগ, ভাবমূর্তি ও চিন্তার বিস্তৃত পরিসর সমসাময়িক সামাজিক ও লিঙ্গ বিষয়ক সূক্ষ্ম পার্থক্যের স্তরগুলো উপলব্ধি করা জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো প্রায়ই জনসাধারণের ব্যবহারে সহজলভ্য আফগানিস্তানের সমকালীন কবিতার দৃশ্যপট সমৃদ্ধ। দেশটি কয়েক দশক ধরে সংঘাত ও অতি দমন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করার সাথে সাথে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। রাজধানী কাবুলে, মাজার-ই শরীফের মতো অন্যান্য বড় শহর ও বাদাখশানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের ফাইজাবাদের মতো ছোটো শহরগুলোর সাথে কবিতার ঐতিহ্যগত দুর্গে দারিভাষী কবি ও সাহিত্যিকদের একটি বিশাল একাগ্রতা রয়েছে। হেরাত শহরের সেই ঐতিহ্যের একটি বিশেষ ধারক দৃশ্য স্পষ্ট। এই অঞ্চলে হেরাতি সংস্কৃতি ও সাহিত্য সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রভাব সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। সমকালীন ফার্সি ও আফগান সাহিত্যের জন্য হেরাত আবার গভীর গুরুত্বের শহর হয়ে উঠতে পারে আর হবে এমন প্রতিটি লক্ষণ রয়েছে। এখানকার কবি ও কবিতার অধ্যয়ন আফগানিস্তানের কবিতাকে সামগ্রিকভাবে বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।