আমজাদ হোসেন ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ বিচার করেছেন একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে। যাঁরাই ইতিহাস বিষয়ে, কিংবা অন্য যেকোনো বিষয়ে, তথ্যানুসন্ধান, গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ করেন, তাঁরা তাই করেন। আর তা করায় সবারই একটা বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকে। নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চা একটা বুর্জোয়া বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই নয়। আমজাদ হোসেন তাঁর ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ রচনায়, কিংবা ইতিপূর্বে প্রকাশিত তাঁর ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল’, ‘বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস’, ’বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস’ ও ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের রূপরেখা’ এবং অন্যান্য বিষয়ে গবেষণামূলক প্রকাশনাসমূহে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য কোনোমতেই গোপন করেননি। একাডেমিক কৃতিত্ব লাভ, পুস্তক বাণিজ্য, সামাজিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রিক আনুকূল্য প্রাপ্তি, এসব উদ্দেশ্য তাঁর নেই, একথা আস্থার সাথে বলা যায়। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে তথ্যানুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন সামাজিক অগ্রগতিতে যারা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন ও করবেন, তাদের হাতে প্রয়োজনীয় উপাদান তুলে দেবার একান্ত সৎ উদ্দেশ্যে। ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই, সেটি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন আমজাদ হোসেন। তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে ১৯৭২ থেকে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দীকালের ঘটনা প্রবাহ’র রেখাচিত্র আঁকতে সেই চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো। সার্থকতা বিচার করবেন তাঁরাই, যারা সমাজ পরিবর্তনের গতি বেগবান করার মহাযজ্ঞে ঋত্বিকের ভূমিকা পালনে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন।
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালে জামাল পুর টাউনে। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মাতা খোদেজা খাতুন। ছাতিয়ানতলা প্রাইমারী স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু। যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন। যশোর মাইকেল মধুসুদন কলেজ (সরকারী) থেকে আইএ ও বাংলা অনার্সে উত্তীর্ণ হন। তিনি অনার্স পরীক্ষা দেন যশোর সেন্ট্রাল জেল ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায়। কলেজে পড়াকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালের শুরুতে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে। প্রথমবার তিনি জেলে যান পাকিস্তান রক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৭ সালে। প্রায় ৮ মাস যশোর ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকেন। দ্বিতীয়বার তাঁকে জেলে থাকতে হয় কিছু সময়। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) এর সম্পাদক ছিলেন। ৮০ দশকের মধ্যভাগ থেকে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন এবং লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বাঙালীর ঐতিহ্য বাঙালীর ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস (২ খÐ), বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, রাজনীতির পাঠ, নকশালবাড়ীর কৃষক আন্দোলন, বর্তমান রাজনীতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি, ত্রিবিশ্বতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রবন্ধ, আলবেনিয়া কোন পথে, পাট সমস্যা, কৃষক সমিতি কাহাকে বলে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমস্যা, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, দাবী বদলে যায়নি (৫ খণ্ড), সমাজ ও ধর্ম, মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি, সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন ও রাজনীতি, মানবেন্দ্রনাথ জীবন ও রাজনীতি, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, মহাপণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের জীবনী, উপন্যাস সমগ্র (২ খণ্ড), ভাগ্যবতী ও অন্যান্য নাটক, সূর্য শপথ, ফেরা, রহিমা, চকলেট ও অন্যান্য গল্প, দশটি ছোট গল্প, ব্যঙ্গ নাটক, নন্দিনী, ভিতুর ডিম, তিনটি প্রবন্ধ ইত্যাদি।