খান-পঞ্চাশেক ছোট-ছোট গান, আট থেকে চৌদ্দ চরণের (অধিকাংশই দশ চরণের) তারও আবার গোটা সাড়ে-তিনেক গায়েব। এইটুকু এক রচনাপুঞ্জ, তারই দাম্পত্যে কেটে গেল প্রায় ততগুলি বছর, মানে ১৯৭৮ থেকে ২০২২ (কত বছর হয়?)। এ-কি লানত না রহমত? জান্নাত না জাহান্নাম? ইড়া না পিঙ্গলা? নাকি সুষুম্না? ইরা-পিঙ্গলার মিলিত স্রোতোধারা; দেহ আর দেহাতীতের, করুণা আর শূন্যের, গঙ্গা ও যমুনার, দজলা আর ফোরাতের, শাতেল আরব...? বৌদ্ধ বিশ্বব্যবস্থায় স্বর্গ বা নরক নাই। ঈশ্বর বা শয়তান। আছে... আগুন আর নির্বাণ। কিন্তু এই জ্বলন, এ-আগুন, যেমন একটা প্রক্রিয়া, কোনো অবস্থা বা অবস্থান নয়, বরং একটা জঙ্গম, সততপরিবর্তমান প্রপঞ্চ, তেমনই এই নির্বাণ। বৌদ্ধ দর্শন এই চলনশীলতারই বীক্ষা। হয়তো। মানে, জ্বলতে থাকা যেমন (একই সঙ্গে) নিবতে থাকাও। এমন এক জোনাকি, যার জ্ব'লে ওঠা আর নিবে যাওয়া একই সঙ্গে হয় হ'তে থাকে- হ'তে থাকতে থাকে, শুরু থেকে শেষ আর শেষ থেকে শুরু; এ-ই মণ্ডল, চক্র। বস্তুতঃ নির্মাণ, ধর্ম, সম্ভোগের ঘাটগুলি এমন হয়তো নয়, যে, নাও বেয়ে তুমি নির্মাণ থেকে ধর্মে, কলাকোপা থেকে বান্দুরা, পৌঁছাচ্ছ। কিন্তু ঘাটগুলো, তোমার সাথে, নদীর, নায়ের সাথে, নিজেরাই বদলে যাচ্ছে। কলাকোপা থেকে বান্দুরা তুমি পৌঁছাও না আসলে, কলাকোপা বান্দুরা হ'য়ে চলে, যাবৎ তোমার না' সোনায় (শূন্যে) উঠছে ভ'রে, রুপা (রূপ) ছিটকে প'ড়ে যাচ্ছে তার থেকে, নদী হচ্ছে অবধূতি; ঘাট, জিনপুর। মানে, তোমার নৌকা সোনায় ভ'রে গেলে, যে-ঘাটে তুমি, সে-ই বান্দুরা। এ-ই বোধ হয়, প্রকারান্তরে, হাল্লাজের আনাল হক।
দক্ষিণ ঢাকার নবাবগঞ্জ থানাস্থ বান্দুরা গ্রামে ১৯৬৫ সালে সুব্রত অগাস্টিন গােমেজের জন্ম। এক বছর বয়সের আগেই পিতার কর্মস্থল ঢাকা শহরে আগমন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা। শৈশব-যৌবনের অধিকাংশ কাটে পুরান ঢাকার নারিন্দা, লক্ষ্মীবাজার, সুত্রাপুর এলাকায়। সেন্ট গ্রেগরী, নটরডেম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশােনা। মধ্য-আশি থেকে লেখা প্রকাশ পেতে শুরু করে নানা লিটল ম্যাগাজিনে। এখনও অবধি মূলতঃ লিটল ম্যাগাজিনেরই লেখক। নিজে, মাসুদ আলী খানের সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন প্রসূন। তাছাড়া শামসুল কবির (কচি) ও ফরহানুর রহমান অপি-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বৈকল্পিক প্রকাশনা সংস্থা পেচা-র সঙ্গে। ইদানীং অগ্রবীজ পত্রিকার নামকাওয়াস্তা যৌথ সম্পাদক।। ১৯৯৫ থেকে সুব্রত অস্ট্রেলিয়ায়। প্রকাশিত বইগুলাের মধ্যে রয়েছে : অন্তউড়ি (চর্যাপদের আধুনিকায়ন, ১৯৮৯), তনুমধ্যা (কবিতা ১৯৯০), কালকেতু ও ফুল্লরা (উপন্যাস ২০০২, পুনঃ ২০১৯), পুলিপােলাও (কবিতা ২০০৩), মাতৃমূর্তি ক্যাথিড্রাল (গল্প ২০০৪, পুনঃ ২০১৯), কবিতাসংগ্রহ (কবিতা ২০০৬), ঝালিয়া (কবিতা ২০০৯), মর্নিং গ্লোরি (কবিতা ২০১০), কবিতা ডাউন আন্ডার। (নির্বাচিত অস্ট্রেলিয় কবিতার অনুবাদ, অংকুর সাহা ও। সৌম্য দাশগুপ্ত'র সাথে, ২০১০), ভেরােনিকার রুমাল। (কবিতা ২০১১), হাওয়া-হরিণের চাঁদমারি (কবিতা। ২০১১), স্বর্ণদ্বীপিতা (বিশ্ব-কবিতার অনুবাদ ২০১১), আমাকে ধারণ করাে অগ্নিপুচ্ছ মেঘ (কবিতা ২০১২), Ragatime (ইংরেজি কবিতা ২০১৬), শ্রেষ্ঠ কবিতা। (কবিতা ২০১৮), ইশকনামা (কবিতা ২০১৯)।।