ইতিহাসের শিক্ষক আরিফুর রহমান। তার চোখ নেই, ঘুমও নেই। তিনি প্রায় অচেতন অবস্থায় বিড়বিড় করছেন। ট্রাকের হর্ন বাজতেই বন্দিশিবিরের প্রধান ফটক খুলে যায়। মিলিটারি ট্রাকটি ভেতরে প্রবেশ করে। আজ রাতেও কিছু ছেলেকে বাহনে তোলা হবে। কাকে কাকে তোলা হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। মৃত্যুকূপে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে, দড়াম করে দরজা খোলার শব্দ হয়। কয়েকজন পাকসৈন্য কক্ষে প্রবেশ করে। থর থর করে কাঁপে মোহন। আরিফ স্যারের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার সাথে কি হবে বুঝতে পারেনা মোহন। একজন সৈন্য ঘরে ঢুকেই স্যারের পা ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেল। মোহনকেও টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে ফেলা হলো। বাকি বন্দীদের এনে জড়ো করা হলো ট্রাকের কাছে। তারপর দুজন সৈন্য দুদিক থেকে ধরে ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে থাকে ট্রাকের ভেতরে। আঘাতের ওপর আঘাত আর তীব্র যন্ত্রণায় কুকড়ে ওঠে মোহন। ধনুকের মত বেকিয়ে যেতে থাকে একেকজনের দেহ। বন্দিশিবিরের গেট দিয়ে ট্রাকটি দ্রুত বেরিয়ে যায়। ত্রিপলের কফিনে জিন্দালাশের আর্তনাদে গুমড়ে গুমড়ে ওঠে বোবা রাজপথ। বোবা রাজপথের বুকের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলে মধ্যরাতের বাহন।