যুগযুগ ধরে আমাদেরকে শেখানো হয়েছে ১৯৪৭-এর ১৫ই আগস্ট ভারতীয়রা ব্রিটিশের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে এ তারিখটি 'স্বাধীনতা দিবস'। কিন্তু যদি সত্য এটাই হয় যে, দিনটি ব্রিটিশের স্বেচ্ছায় চলে যাবার তারিখ অথবা শক্তির হস্তান্তর দিবস মাত্র-তাহলে? সম্রাট অশোকের মতো কত সব প্রাচীন সম্রাট এবং রাজাদের ইতিহাস যুগযুগ ধরে শেখানো হচ্ছে । কিন্তু যদি প্রমাণিত হয় যে তাঁদের অনেকের মতো সম্রাট অশোক নামে কোনো সম্রাটের পৃথিবীতে জন্মই হয়নি-তাহলে? দেশের মানুষকে শেখানো হয়েছে মুসলমানেরা উন্নতি করতে পারেনি কারণ তারা নাকি ব্রিটিশ সরকারের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি, আর এ না পারার পিছনে ছিল নাকি তাদের ধর্মের গোঁড়ামি, অহমিকা অথবা ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অবহেলা-এক কথায় দূরদর্শিতার অভাব! কিন্তু যদি প্রমাণিত হয় যে, সে সময় শাসক সরকারের সাথে খাপ খাইয়ে' নেওয়ার অর্থ ছিল ব্রিটিশের শোষণ ও অপশাসনকে সার্বিক সমর্থন করা, তাতে মদদ জোগানো, স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্বধর্ম ত্যাগ করা এবং সাহেবদের আদেশ-আবদার-উপদেশ অনুযায়ী নিজের স্ত্রী, কন্যা, বোন ও পুত্রবধূকে নিবেদন করে তাদের ঔরসজাত মিশ্রিত রক্তের একটি সহকারী ভারতীয় দল সৃষ্টি করার জন্য। দেওয়া- তাহলে? এ বইটি পড়ে পরিতৃপ্তি পেতে হলে প্রথমে পড়ে নেওয়ার জন্য আমার লেখা 'পুস্তক সম্রাট', 'বাজেয়াপ্রাপ্ত ইতিহাস', 'চেপে রাখা ইতিহাস এবং এ সত্য গোপন কেন?' বই চারটি; আমার লেখা ‘সেরা উপহার' 'রক্তাক্ত ডায়েরী' 'রক্তে রাঙা ছন্দ' ইত্যাদি বইগুলো 'বজ্রকলম' পড়ার আগে পড়া তত জরুরি নয়।
ইতিহাসবিদ আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা: ইনি হলেন সেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মহান ব্যাক্তি গোলাম আহমদ মোর্তাজা যার বই এবং তাকরিরের মাধ্যমে মানুষ হাজারো ইতিহাস জানতে পেরেছে। গোলাম আহমাদ মোর্তজা জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের'র বর্ধমান জেলার মেমারিতে। তিনি একজন বক্তা,গবেষক ও লেখক। তিনি দুই বাংলার অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন পলাশীর যুদ্ধ,অন্ধকূপ হত্যাকান্ড, মহামতি আকবরের কথা এমনি অনেক নতুন তথ্য তিনি প্রমাণসহ পেশ করেন। যা আসলে আমরা যেভাবে জানি সেভাবে বলা হয়নি। তাঁর পুস্তক পাঠে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে যায় পাঠক, কিন্তু গোলাম আহমাদ মোর্তজা এমনভাবে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তাতে তাকে মেনে নিতে হয়েছে ভারতের বর্তমান ঐতিহাসিকদের। বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা তার তথ্য মেনে নিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দেন যা চাপা পরে ছিলো ইতিহাসের পাতায়। তিনি সেগুলোকে সামনে তুলে আনার চেষ্টা করেন। তাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ভারতে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তিনি বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনি "বক্তা সম্রাট' নামে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর কয়েকটি ইতিহাসের বই ও ইতিহাস ভিত্তিক বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে। ইতিহাসের ইতিহাস, চেপেরাখা ইতিহাস,বাজেয়াপ্ত ইতিহাস,পুস্তক সম্রাটসহ অনন্য ইতিহাসের বইয়ের মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। ভারতের গতানুগতিক ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে মুসলিমদের নিয়ে লিখিত বিভিন্ন তথ্য তিনি বানোয়াট দাবী করেন। সেই তথ্যগুলোর বিরোধীতা করেন এবং সেগুলো মিথ্যা তথ্য তিনি প্রমাণসহকারে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন এই গ্রন্থ গুলোতে। পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ,গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায়,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,দেবেন্দ্ররনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে সমালোচনা করেন এবং তাদের চাপা পরা ইতিহাস সামনে তুলে এনে প্রমাণসহকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের সরকার ১৯৮১ সালে তাঁর একটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর তিনি একেরপর এক ইতিহাসের বই প্রকাশ করতে থাকেন,যার সিংহভাগ বই'ই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সরকার বাতিল করেন। তাঁর উপর সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনায় গোলাম আহমাদ মোর্তজা তাঁর "বাজেয়াপ্ত ইতিহাস" গ্রন্থে এর প্রতিবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরতের নেক হায়াত দারাজ করেন এবং মানুষের সামনে বই আকারে হোক অথবা ওয়াজ, বক্তৃতা মাধ্যমে হোক সত্যকে উন্মেচন করার তৌফিক দান করুন।