বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ছিল খোকা। আদরের খোকা পরবর্তীতে গ্রামবাসীর কাছে মিয়াভাই, সহকর্মীদের কাছে মুজিবভাই, বাঙালিদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনক। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ যে খোকার জন্ম হয়েছিল মাত্র একান্ন বছরের ব্যবধানে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করে সেই খোকাই পৃথিবীতে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তৈরি করলেন। হয়ে গেলেন ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধুৃ’। বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত হৃদয়বান ছিলেন। দুঃখী মানুষের কষ্টে তিনি খুবই ব্যথিত হতেন। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তি তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের মহানায়ক, রাজনীতির মহাকবি বলা হয়। কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রো জাতির পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু তোমাকে দেখেছি” বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল থেকে শুরু করে তাঁর জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছড়া ও কবিতায় ‘টুঙ্গিপাড়ার খোকাবাবু’ শিরোনামে গ্রন্থটি রচনা করেছেন সমকালীন বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত জনাব মুহাম্মদ নূরুল হুদা। আশা করি বইটি পাঠ করে বর্তমান প্রজন্ম উপকৃত হবে। পাঠকদের ভালোবাসা আর সৃজনশীলদের দ্ব্যর্থহীন সহযোগিতায় ঝিঙেফুলের বর্ণালী সকল ঘরে পৌঁছাক; গড়ে উঠুক স্বাধীনতার নতুন প্রজন্ম--এই প্রত্যাশা।
মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ সেকান্দর ও মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। মূলত কবি তিনি। তবে কথাসাহিত্য, মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি বিচরণশীল। অতিপ্রজ ও সব্যসাচী এই লেখকের স্বরচিত, অনূদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রাপ্ত পুরস্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪), আহসান হাবীব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), যুক্তরাষ্ট্রের আই.এস.সি ঘোষিত পয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পয়েট অব দ্য ইয়ার (১৯৯৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), জীবনানন্দ জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), একুশ-উনিশে ভাষা গৌরব শীর্ষক ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১২) ইত্যাদি। ১৯৯৭ সালে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর বাংলা একাডেমিতে চাকরি বদল। এখানেই বিকশিত তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের লেখকদের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি। তিনি আন্তর্জাতিক লেখক দিবসের প্রবক্তা। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও তিনি সর্বমহলে সমাদৃত।