পিতা-পুত্র সম্পর্ক এই উপমহাদেশে প্রাণবন্ত ছিল না কখনোই, অনেকটা পলি বহন করে চলা নদীর ঘোলা জলের মতো অনেক সম্পদশালী কিন্তু অস্বচ্ছ। সেদিক থেকে মা-ছেলের সম্পর্ক অনেক এগিয়ে। চাণক্য সেনের 'পুত্র পিতাকে' উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্র কেতুকে ঘিরে। যুগের থেকে অনেক এগিয়ে থাকা অধ্যাপক পিতার পুত্র কেতু। কেতুর পিতা তাঁর পিতা থেকে যা পাননি তা দিতে চেয়েছেন নিজের পুত্রকে। কেতু ছোটবেলা থেকেই পিতার কাছে পেয়েছে বন্ধুত্ব ও স্বাধীনতা। একপর্যায়ে পিতার সাথে জীবনযুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে কেতু। বোহেমিয়ান তরুণী সুজান ফোর্ড কেতুর জীবনে এসে সব ওলটপালট করে দেয়। সুজানকে ঠিক মেনে নিতে পারেন না কেতুর পিতা। সুজানের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই কেতুর পিতা মেয়েটিকে অপছন্দ করে বসেন। অথচ পিতাই একদিন বলেছিলেন- যে ধর্মের, যে বর্ণের মেয়েকেই কেতু বিয়ে করুক না কেন, তাঁর আপত্তি থাকবে না। কিন্তু সুজানের বেয়াড়া জীবন দেখে অধ্যাপক পিতা তাদের বিয়েতে বাধ সাধেন। ফলে পিতা-পুত্রের সম্পর্কে চিড় ধরে। সুজানের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে কেতু। নিজের চব্বিশতম জন্মদিন উপলক্ষে পিতাকে চিঠি লিখেছে কেতু। অনেকটা কনফেসের মতো চিঠিটা। কিছু না চেপে রেখে লিখে গিয়েছে তার জীবন সম্পর্কে, জীবনবোধ সম্পর্কে। যেন একটা বিশাল ক্যানভাসে নিজের মনের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে কেতু দারুণ দক্ষতায় । এই চিঠিটাই উপন্যাস। পিতাকে ভালোবাসা, পিতার থেকে দূরে সরে আসা, বিচ্ছিন্নতার ব্যাকুলতা, পুনরায় ফিরে আসার চেষ্টার দারুণ একটা মহাকাব্য এই উপন্যাস ।