ষাটের শেষে আবির্ভাব, সত্তরে উজ্জ্বল প্রকাশ; বাংলাদেশের কবিতার মিথ তিনি, কবির বিমূর্ত কল্পনা। কারো ভাবনায় অর্ধেক মানবী; কারো কাছে অর্ধেক ঈশ্বরী। বন্ধু আবুল হাসান লিখেছিলেন তাঁকে উৎসর্গ করা 'পৃথক পালঙ্ক'-এ 'তুমি শিল্পীত বৃক্ষের চূড়া: দেবদারুর মতো/মুগ্ধ কিন্নরের অবিনাশী গান।' (তুমি) শামসুর রাহমান বলেছিলেন: মৃত্যুর পরে খাটিয়ায় শোয়ানো আবুল হাসানের লাশ যখন দেখছিলাম তখন আমার বারবার মনে পড়ছিল-'পৃথক পালঙ্ক'-র কথা। কেন তাঁর সব শেষের কাব্যগ্রন্থের জন্য এ নাম কবি নির্বাচন করেছিলেন, তখন তাঁর কল্পনাতুর দৃষ্টিতে কি ভেসে উঠেছিল একটা আলাদা পালঙ্ক? তিনি কি সেই মুহূর্তে দেখতে পেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুশয্যা? (বেতার বাংলা, ১৬ ডিসেম্বর সংখ্যা, ১৯৭৫) তেমনি আমেরিকা থেকে আকাশলীনায় প্রকাশিত সম্পাদক কামরুন জিনিয়া যখন সুরাইয়া খানমকে উৎসর্গিত সম্পাদকীয়তে 'লং ডিসট্যান্স রানার' উদ্ধৃত করে জানান-সুরাইয়া খানম মৃত্যুর আগে লিখেছিলেন তাঁর এই কবিতা; যা তিনি পাঠিয়েছিলেন তাঁর পত্রিকায় প্রকাশের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কবির জীবদ্দশায় ছাপা হতে পারেনি। কে জানত এটিও ছিল আবুল হাসানের মতোই সুরাইয়া খানমেরও চোখের সামনে স্বপ্নে দোল খাওয়া মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফেরার সকরুণ আর্তি ও আর্তনাদ : 'আমারও ক্লান্তি আছে, নিদ্রা আছে।আমারও সপ্রেম আশা আছে।/আমি যাবো সুদর্শনা অপরূপা মাতৃভূমিতে । /লং ডিসট্যান্স রানার আমি, আমি সেই দেশে যাবো।/এখানে সেখানে নাই, অনুভবে আছে।'