উপন্যাসটি লেখক ধ্রুপদ-এর ২য় উপন্যাস। এটি প্রথমে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। প্রথম খণ্ড ২০০৩ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘বৈষম্য’ নামে প্রকাশিত হয় এবং বেশ প্রশংসা কুড়ায় পাঠকের। এই বইয়ের মাধ্যমেই লেখকের নাম পাঠকদের মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাঠক এর ২য় খণ্ডের জন্য প্রকাশনীর কাছে ধন্যা দিতে থাকে। ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ২০০৪ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এর ২য় খণ্ড উপন্যাস ‘বেধ’ প্রকাশিত হয়ে এবং একইভাবে প্রথম খণ্ডের ন্যায় তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে খণ্ড দুটিকে একসাথে ‘বৈষম্যবেধ’ নামকরণে উপন্যাসটি প্রকাশ করা হয়। উপন্যাসটি লেখা হয়ে তিন প্রজন্মকে নিয়ে। অর্থাৎ দাদা-বাবা এবং ছেলে। পাঠকেরা যখন উপন্যাসটি পড়তে শুরু করে তখন লেখক তাদেরকে ভাবজগতে হারিয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেন ঠিক তাদের দাদার সাথে আমলে ঘুরে বেড়াবে। হঠাৎ করেই আবার দেখবে তারা তাদের বাবার সাথে বাবার আমলে আছে। আবার ঠিক একইভাবে নিজের সময়টাতে ফিরে আসবে। উপন্যাসটি পড়ে পাঠকেরা বারংবার লেখকের সাথে দেখা করতে চেয়েছেন কিন্তু লেখক তো মরীচিকা; সহজে ধরা দেয় না। পাঠকদের মনে আজ অবদি একটি প্রশ্ন এবং নালিশ লেখকের প্রতি। আর তা হলো; শরীফার মেয়ে বিলকিসের কেন এভাবে অপঘাতে মৃত্যু হবে। এতটা পাষান না হলেও পারতেন লেখক। কিন্তু লেখকের উত্তর, বাস্তবে বিলকিসের এভাবেই মৃত্যু হয়েছে। এভাবেই মৃত্যু হয় ওদের। কেননা এই সমাজ ওদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দেয় না। কোনোদিন দেয়নি; ভবিষ্যতে দেবে কিনা তা ভবিষ্যতই জানে। আশা করি উপন্যাসটি আজ অবধি যেভাবে হাজারো পাঠকের মন জয় করে চলেছে তা বর্তমান ও ভবিষ্যতেও করবে।
আজ প্রায় ২৬ বছর পর লেখক ধ্রুপদ তাঁর লেখা বই সারা বছর বাজারজাতকরণের অনুমতি দিয়েছেন। অতএব আশা করা যায়, এবার থেকে রকমারী তেও তাঁর লেখা বইসকল পাওয়া যাবে। লেখক ধ্রুপদ, জন্ম : ৫ নভেম্বর, ১৯৭২ বর্ণচোরা; স্পষ্টভাষী, নিজের ইচ্ছে মতো লেখেন, নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। তারপরও পাঠক যেন তাঁর লেখনী পড়ে নিজের মনোজগতে তরঙ্গ অনুভব করেন। ফলে পাঠকের সীমাহীন চাহিদার কাছে নত হয়ে ভোরের শিশির প্রকাশণী প্রতি বছর তাঁর লেখা পুরোনো বইগুলো নতুন করে ছাঁপাতে বাধ্য হয়। কেননা লেখক ধ্রুপদ-এর কাছ থেকে নতুন লেখার আশা করা মানেই মরীচিকার পেছনে ছোটা! দীর্ঘ ২৬ বছরে তিনি মাত্র আটটি বই লিখেছেন এবং এই ২৬ বছরে তিনি আজ পর্যন্ত পাঠক কিংবা মিডিয়া কারো সামনেই নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটাননি। ভবিষ্যতে করবেন কিনা তারও কোনো ঠিক নেই। মূলত নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছায় নয় বরং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিলাষে লেখক তাঁর সাহিত্য চর্চা করেন। লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যখন তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন পুনরাবিষ্কারের পথে ঠিক তখুনই তিনি লিখতে বসেন। নচেৎ বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে কিন্তু তিনি কলম ধরবেন না। পাঠকের প্রবল চাহিদার কাছেও কখনো নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হন না। তিনি একজন শিল্প কৌশলী। অলঙ্করণে তাঁর দক্ষতা অনস্বীকার্য... ভোরের শিশির প্রকাশনার যত ধরনের বইয়ের প্রচ্ছদ ও আনুসাঙ্গিক শিল্প কৌশল ধারণা সব এই লেখক ধ্রুপদ এরই করা। যারা তাঁর লেখা পড়েছেন তাদের নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যারা পড়েননি তাদের বলবো, তাঁর লেখা যে কোন একটি বই পড়ে দেখুন। আপনিও তাঁর নিয়মিত পাঠক হবেন এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। তাছাড়া একজন লেখককে চিনতে অথবা তাঁর দর্শনগত ভাবনা অনুভব করতে হলে লেখকের মনন জগতের সুলুক সন্ধান জরুরি। কারণ লেখকের সকল ভাবনার অনুবীজগুলোর প্রকাশময়তা কাগজে কলমে রূপ পায় তাঁর সাহিত্য কর্মে।... তাঁর লেখা প্রথম বই কুহক কূতুহল যা আজন্ম ক্ষুধা নামে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবং বেশ সফলতার সাথে বইটির প্রশার ঘটে। এখন পর্যন্ত পাঠকদের কাছে এর চাহিদা অনেক। তার দীর্ঘ সাত বছর পর অর্থাৎ ২০০৩ সালে তাঁর ২য় উপন্যাস বৈষম্য বের হয়। এই উপন্যাসটির মাধ্যমেই পাঠকদের মাঝে তাঁর পরিচিতি বেশি ঘটে। এর ঠিক পরের বছরই এর ২য় খণ্ড বেধ বের হয় এবং এটিও ঠিক একইভাবে জনপ্রিয় হয়। পরবর্তীকালে বইটির দুই খণ্ড একসাথে বৈষম্যবেধ নামে প্রকাশিত হয় এবং বর্তমানে এই নামেই উপন্যাসটির বেশ পরিচিত। এর ঠিক প্রায় তিন বছর পর ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৩য় উপন্যাস ঘুড়ি যা পাঠকদের চিন্তাধারায় সাংঘাতিকভাবে নাড়া দেয়। কেন? তা যারা বইটি পড়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে। আর এই ঘুড়ি বইটি কেবল অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যই নিষিদ্ধ না; যারা কিনা মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ তাঁদের জন্যও বইটি নিষিদ্ধ। যাই হোক তার ঠিক পরের বছরই বের হয় তাঁর ৪র্থ উপন্যাস লালবউ যা সেই ববছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। মজার ব্যাপার হলো সে বছরই অন্যপ্রকাশ বাজারে নিয়ে আসে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের হলুদ হিমু উপন্যাসটি কিন্তু গ্রন্থমেলায় সবার মুখে মুখে কেবল লালবউ উপন্যাসের নাম শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে তার খোঁজ নিতে আসে বইটির বিষয়ে। আর দুঃখের বিষয় হলো মেলার ঠিক দু’দিন আগে লালবউ এর স্টক শেষ হয়ে যায়। আর ঠিক এই সুযোগে হুমায়ূন আহদের সেই হলুদ হিমুবেস্ট সেলার হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয় তাঁর লেখা ৫ম উপন্যাস কাপালিক যা এখন কাকচরিত্র নামেই বেশ পরিচিত বাজারে। এরপর ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৬ষ্ঠ উপন্যাস পাঁশুটে। তারপর ২০১৬ এবং ২০২০ এ যথাক্রমে তাঁর ৭ম ও ৮ম উপন্যাস নন্দিপাড়া আজো বৃষ্টি পড়ে এবং নাটলা বেলগাছি প্রকাশিত হয়। এরপর হাজার চাহিদা থাকা সত্যেও এখন পর্যন্ত আর কোন লেখা তিনি লিখেননি। কিন্তু পাঠকেরা ঠিকই চাতক পাখির ন্যায় আশায় বুক বেঁধে আছে