উপন্যাসটি মূলত ‘ঘুড়ি’ উপন্যাসের ২য় খণ্ড। ঘুড়ি উপন্যাসটি পড়ার পর পাঠকেরা এই পরিমাণই আত্মহারা হন ঘুড়ি উপন্যাসের দুটি চরিত্র শ্রাবণী ও ছন্দার পূর্ণাঙ্গ জীবনী জানার জন্য। কেননা পাঠকগণ সকলেরই ততদিনে জানা হয়ে গিয়েছে যে, লেখক ধ্রুপদ সত্য কাহিনী দিয়েই উপন্যাস লেখেন। তাই তারা ভোরের শিশির প্রকাশনীর মাধ্যমে লেখক বরাবর আরজ গুজার করেন যে, এই দুই চরিত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি উপন্যাস লিখার। লেখক পাঠকদের এই অনুরোধ রাখেন। ২০০৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এই দুই চরিত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি উপন্যাস ‘লালবউ’ প্রকাশিত হয়। এবং সে বছর গ্রন্থমেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে বইটি। সকলের মুখে মুখে ‘লালবউ’। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে বছরই অন্য প্রকাশ জনপ্রিয় লেকক হুমায়ূন আহমেদের ‘হলুদ হিমু’ বইটি প্রকাশ করে। কিন্তু হলুদ হিমু বইয়ের পাঠেকদের মুখেও কেবল ‘লালবউ’ উপন্যাসের জপ। শেষে বিরক্ত হয়ে অন্য প্রকাশ প্রকাশনী তাদের বেশ কিছু প্রতিনিধিকে পাঠান ভোরের শিশির প্রকাশনীতে ‘লালবউ’ বইটি আসলে কার সেটা দেখার জন্য। হয়তো তারা লেখক ধ্রুপদ এর সাথে যোযোগেরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। কেননা তাঁকে খুঁজে পেতে হলে এই ভোরের শিশির প্রকাশনীরই দ্বারস্ত হতে হবে। ভোরের শিশিরকে বাদ দিয়ে লেখক ধ্রুপদকে পাওয়া অসম্ভব। এ বিষয়টি এতদিনে ধ্রুপদ এর পাঠকগণও বেশ ভালোভাবে বুঝে গিয়েছেন। যাই হোক, সেই বছর বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে দুই উপন্যাসে। কোন উপন্যাসটি বেস্ট সেল হয়। কিন্দু অতীব দুঃখের বিষয় যে মেলা শেষের ঠিক দুইদিন আগে অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারী (তখন মেলা চলতো ২১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত) ‘লালবউ’ বইটির স্টক শেষ হয়ে যায়। আর শেষ দুইদিনে ‘হলুদ হিমু’ বাজিমাত করে দেয়। প্রথমত উপন্যাসের নামে সকলের বিস্ময়! ‘লালবউ’ নামকরণের কারণটি হচ্ছে, আমাদের এই বাঙালী সকল মেয়েদেরই জীবনে একটিই স্বপ্ন ছিলো যা এখন আর দেখা যায় না, আর তা হলো জীবনে একবার হলেও তাঁরা লাল বেনারশি পড়ে বউ বেশে অন্যর ঘরে যাবে। এই লাল বেনারশি পড়ার অভিলাষ থেকেই ‘লালবউ’ নামকরণ করা হয়েছে। শ্রাবণী গ্রামের জমিদারের একমাত্র কন্যা। বেশ আদরের। কিন্তু বয়ঃস্বন্ধিকালের একটি ভুল। আর সেই ভুলের ওর জীবন মোহনা কোথায় গিয়ে ঠেকে। আর ছন্দা? গ্রামের একমাত্র শিক্ষিত অথচ স্কুল মাস্টারের আদরের একমাত্র মেয়ে। বয়ঃস্বন্ধিকালে ওর জীবনে কোনো ভুল নেই। বাবার আদর্শই গড়া জীবন ওর। কিন্তু তারপরও ওর ভবিষ্যত জীবনটাও কেন যেন সেই একই মোহনাতে গিয়ে মেলে যেখানে শ্রাবণীর জীবন। কীভাবে কিংবা কী কারণে ওদের দু’জনারই জীবন একই মোহনাতে মিলিত হয়েছে তা উপন্যাসটি পড়েই পাঠকদের জানতে হবে।
আজ প্রায় ২৬ বছর পর লেখক ধ্রুপদ তাঁর লেখা বই সারা বছর বাজারজাতকরণের অনুমতি দিয়েছেন। অতএব আশা করা যায়, এবার থেকে রকমারী তেও তাঁর লেখা বইসকল পাওয়া যাবে। লেখক ধ্রুপদ, জন্ম : ৫ নভেম্বর, ১৯৭২ বর্ণচোরা; স্পষ্টভাষী, নিজের ইচ্ছে মতো লেখেন, নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। তারপরও পাঠক যেন তাঁর লেখনী পড়ে নিজের মনোজগতে তরঙ্গ অনুভব করেন। ফলে পাঠকের সীমাহীন চাহিদার কাছে নত হয়ে ভোরের শিশির প্রকাশণী প্রতি বছর তাঁর লেখা পুরোনো বইগুলো নতুন করে ছাঁপাতে বাধ্য হয়। কেননা লেখক ধ্রুপদ-এর কাছ থেকে নতুন লেখার আশা করা মানেই মরীচিকার পেছনে ছোটা! দীর্ঘ ২৬ বছরে তিনি মাত্র আটটি বই লিখেছেন এবং এই ২৬ বছরে তিনি আজ পর্যন্ত পাঠক কিংবা মিডিয়া কারো সামনেই নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটাননি। ভবিষ্যতে করবেন কিনা তারও কোনো ঠিক নেই। মূলত নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছায় নয় বরং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিলাষে লেখক তাঁর সাহিত্য চর্চা করেন। লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যখন তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন পুনরাবিষ্কারের পথে ঠিক তখুনই তিনি লিখতে বসেন। নচেৎ বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে কিন্তু তিনি কলম ধরবেন না। পাঠকের প্রবল চাহিদার কাছেও কখনো নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হন না। তিনি একজন শিল্প কৌশলী। অলঙ্করণে তাঁর দক্ষতা অনস্বীকার্য... ভোরের শিশির প্রকাশনার যত ধরনের বইয়ের প্রচ্ছদ ও আনুসাঙ্গিক শিল্প কৌশল ধারণা সব এই লেখক ধ্রুপদ এরই করা। যারা তাঁর লেখা পড়েছেন তাদের নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যারা পড়েননি তাদের বলবো, তাঁর লেখা যে কোন একটি বই পড়ে দেখুন। আপনিও তাঁর নিয়মিত পাঠক হবেন এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। তাছাড়া একজন লেখককে চিনতে অথবা তাঁর দর্শনগত ভাবনা অনুভব করতে হলে লেখকের মনন জগতের সুলুক সন্ধান জরুরি। কারণ লেখকের সকল ভাবনার অনুবীজগুলোর প্রকাশময়তা কাগজে কলমে রূপ পায় তাঁর সাহিত্য কর্মে।... তাঁর লেখা প্রথম বই কুহক কূতুহল যা আজন্ম ক্ষুধা নামে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবং বেশ সফলতার সাথে বইটির প্রশার ঘটে। এখন পর্যন্ত পাঠকদের কাছে এর চাহিদা অনেক। তার দীর্ঘ সাত বছর পর অর্থাৎ ২০০৩ সালে তাঁর ২য় উপন্যাস বৈষম্য বের হয়। এই উপন্যাসটির মাধ্যমেই পাঠকদের মাঝে তাঁর পরিচিতি বেশি ঘটে। এর ঠিক পরের বছরই এর ২য় খণ্ড বেধ বের হয় এবং এটিও ঠিক একইভাবে জনপ্রিয় হয়। পরবর্তীকালে বইটির দুই খণ্ড একসাথে বৈষম্যবেধ নামে প্রকাশিত হয় এবং বর্তমানে এই নামেই উপন্যাসটির বেশ পরিচিত। এর ঠিক প্রায় তিন বছর পর ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৩য় উপন্যাস ঘুড়ি যা পাঠকদের চিন্তাধারায় সাংঘাতিকভাবে নাড়া দেয়। কেন? তা যারা বইটি পড়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে। আর এই ঘুড়ি বইটি কেবল অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যই নিষিদ্ধ না; যারা কিনা মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ তাঁদের জন্যও বইটি নিষিদ্ধ। যাই হোক তার ঠিক পরের বছরই বের হয় তাঁর ৪র্থ উপন্যাস লালবউ যা সেই ববছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। মজার ব্যাপার হলো সে বছরই অন্যপ্রকাশ বাজারে নিয়ে আসে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের হলুদ হিমু উপন্যাসটি কিন্তু গ্রন্থমেলায় সবার মুখে মুখে কেবল লালবউ উপন্যাসের নাম শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে তার খোঁজ নিতে আসে বইটির বিষয়ে। আর দুঃখের বিষয় হলো মেলার ঠিক দু’দিন আগে লালবউ এর স্টক শেষ হয়ে যায়। আর ঠিক এই সুযোগে হুমায়ূন আহদের সেই হলুদ হিমুবেস্ট সেলার হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয় তাঁর লেখা ৫ম উপন্যাস কাপালিক যা এখন কাকচরিত্র নামেই বেশ পরিচিত বাজারে। এরপর ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৬ষ্ঠ উপন্যাস পাঁশুটে। তারপর ২০১৬ এবং ২০২০ এ যথাক্রমে তাঁর ৭ম ও ৮ম উপন্যাস নন্দিপাড়া আজো বৃষ্টি পড়ে এবং নাটলা বেলগাছি প্রকাশিত হয়। এরপর হাজার চাহিদা থাকা সত্যেও এখন পর্যন্ত আর কোন লেখা তিনি লিখেননি। কিন্তু পাঠকেরা ঠিকই চাতক পাখির ন্যায় আশায় বুক বেঁধে আছে