"মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস" বইয়ের ভূমিকা: মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস লিখতে গিয়ে আরেকবার গভীর বেদনা নিয়ে লক্ষ করলাম, আদমশুমারির ভিত্তিতে দেশগুলাে মুসলিম হিসেবে পরিচিত হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, আদর্শ ও মূল্যবােধের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায় সব দেশই মুসলিম মূল্যবােধ ও দর্শন লালন করে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি রাষ্ট্রেও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই। বরং অধিকাংশ দেশে ঘােষণা দিয়ে নাস্তিক হিসেবে নিরাপদে ও সম্মানের সাথে বসবাস করা গেলেও ঘােষণা দিয়ে মুসলিম হিসেবে নিরাপদে বসবাসের সুযােগ নেই। অনেক দেশেই শাসকগণ ইসলামী আদর্শ, মূল্যবােধ ও নৈতিকতা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন না, নিজেরা চর্চা করেন না, রাষ্ট্রীয়ভাবে চর্চা করার পথও বন্ধ করে রাখেন। উমাইয়া-আব্বাসীয় যুগে এমন অবস্থাই ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য, সে যুগকে আমরা ইসলামের ইতিহাসে পাঠ্য হিসেবে পড়ি। অথচ উমাইয়া-আব্বাসীয়দের শাসন ইসলামের ইতিহাসের অংশ হতে পারে না। বরং হযরত হুসাইন (রা), ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতাে মুসলিম মনীষীগণের ইতিহাসই ইসলামের ইতিহাস। তাঁরা উমাইয়া-আব্বাসীয়দের নির্যাতনে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস লিখতে গিয়ে আমি বেদনার পাশাপাশি ভীষণ আশাবাদীও হয়ে উঠেছি। অমুসলিম দেশগুলােতে মুসলিমদের সংখ্যা দেখে বিস্মিত হয়েছি। নাস্তিক্যবাদের জঠর থেকে মধ্য এশিয়ায় কতগুলাে মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্ভব, হােসনী মােবারকের মতাে স্বৈরশাসকের দেশে মুসলিম জনতার বিজয়, কামাল আতাতুর্কের তুরস্কে ইসলাম পন্থিদের জয় আমাকে আশান্বিত করেছে। আমি নিশ্চিত, বর্তমান বিশ্বের আদর্শবাদী মহাশূন্যতার যুগে, মানবতার এ চরম দুঃসময়ে ইসলামই পথ দেখাবে বিশ্বমানবকে। দেশে-দেশে ইসলামের জন্য মানুষের আত্মত্যাগ সে ইতিহাসেরই পটভূমি রচনা করছে। আল্লাহ তাআলা এ সকল মানুষের আত্মত্যাগকে কবুল করুন এবং বিশ্বকে আবার উদ্ভাসিত করুন ইসলামের চিরন্তন কল্যাণময় আদর্শের শাশ্বত আলােয়। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস' একটি সংকলন গ্রন্থ। নানা উৎস থেকে এখানে তথ্য সংকলন করা হয়েছে মাত্র।