হাসনাকে চোখ খুলতে দেখে একজন ডাক্তার বললেন, কংগ্রাচুলেশনস, আপনি মা হয়েছেন। তবে হাসনার কান অবধি একথা এলো না। ডাক্তার তার মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে আরো কিছু বললেন। কিন্তু হাসনার কানে শুধুমাত্র সন্তানের কান্নার শব্দ বাদে কিছুই ঢুকছে না। তার চারপাশটা কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। সেই অন্ধকারের মাঝে তিনি একটি সর্বনাশী আলোর রশ্মি দেখছেন। তার স্বামীর কথা মনে পড়ছে। মনে পড়ছে পাঁচ বছর বয়সী ছেলের কথা যে চকলেট খেতে চেয়েছিল। গাড়ির ভেতরে তো এই দু’জন মানুষও ছিল। ওরা ঠিক আছে তো? হাসনার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। ডাক্তার তার মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগালেন। হাসনা আরো একবার জোর করে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। সন্তানের কান্নায় মায়েরা হাসে একবারই। সেটি হলো জন্মের পরে যখন সন্তান কাঁদে। এই কান্নার অর্থ সন্তান সুস্থ আছে। কিন্তু হাসনার বেলায় এমন হচ্ছে না। সন্তানের কান্নার শব্দে তার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। চোখের ডগা বেয়ে পানি পড়ছে। একজন নার্স তার সন্তানকে কোলে করে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সন্তান চিৎকার করে কাঁদছে। এই কান্নার আওয়াজ তার কলিজায় এসে লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে তার কলিজায় আঘাত করছে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে হাসনার খুব ইচ্ছে করলো একজন ডাক্তারকে প্রশ্ন করতে, তার সন্তানটি ছেলে না মেয়ে?
অংকন, জন্ম ৭ অক্টোবর, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ, ঠাকুরগাঁও। মা মোছাঃ জাহেদা বেগম একজন গৃহিণী এবং বাবা মোঃ ইকবাল হোসেন একজন ব্যবসায়ী। বই পড়ার প্রচণ্ড আগ্রহই আস্তে আস্তে বই লেখার প্রতি অনুপ্রাণিত করে। দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন তার লেখা ছোট গল্প ‘আর স্কুল’ ছাপা হয় প্রথম আলো পত্রিকায়। এছাড়াও দৈনিক লোকায়ন পত্রিকার সাহিত্য পাঠেও তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকে লেখার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। অংকন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ‘দখিনা’ চিঠি তার তৃতীয় উপন্যাস। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’এ ‘শূন্য ঠিকানা’ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করেন।