প্রাককথন প্রতিটি মানুষ তার জীবন-সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ সে নিজেই জানে না কবে ওপারের ডাক আসে। কাজ ফুরাবার আগেই মহাকাল দরজায় এসে কড়া নাড়ে। হয়তো পৃথিবীর কাঁধেই এক অদৃশ্য জোয়াল আটকে দিয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। কোনো এক বলয়ে ঘুরতে থাকা পৃথিবী একদিন হাঁপিয়ে ওঠবে, অদৃশ্য জোয়াল আর টানতে পারবে না। উপস্থিত হবে প্রলয়ংকরী ধ্বংস। সেই সাথে মহাকালের অতলে তলিয়ে যাবে পৃথিবীর যাবতীয় সুখ-দুঃখ, পাওয়া না পাওয়ার আকাক্সক্ষা। মানুষের এই জীবনের ছোট্ট পরিসরেও কাঁধে আটকে রয়েছে এক অদৃশ্য জোয়াল। দৈনন্দিন গল্পগাথায় সে জোয়াল কাঁধে বিঁধতে থাকে। যৌবনের নব উদ্যমে আমরা ছুটে চলি অজানাকে জানার মানসে। দুঃখকে পায়ে দলিয়ে সুখের পানে পাড়ি জমাই। সময়ের এই রিলে দৌড়ে কোনো এক ক্রান্তিকালে জোয়ালকাঁধে নুয়ে পড়ি। আর মৃত্যু এসে কাঁধ হতে জোয়াল নামের ধর্তব্য দায়িত্ব সরিয়ে নেয়। এই তো জীবন! আর জীবনের বাঁকে বাঁকে উঁকি দেয়া গল্পগুলোই মহাকালের খোরাক। সেখান থেকে নিয়েই আবার নতুন করে যাবর কাটি। এই বইয়ে সন্নিবেশিত গল্পগুলো নব্বইয়ের দশক থেকে বর্তমান প্রজন্মের প্রেক্ষাপটে লিখিত। মূলত নব্বইয়ের দশক থেকেই বিশে^ তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন স্বর্ণদ¦ার উন্মোচন হয়। গ্রেগরিয় পঞ্জিকা অনুসারে ২০০১ হতে ২১০০ সাল পর্যন্ত একবিংশ শতাব্দী। আর বিংশ শতাব্দীর সাথে নতুন সেতুবন্ধন রচনায় বর্তমানে যাঁরা বেঁচে আছেন তাদের রয়েছে স্বাতন্ত্র্য অংশীদারিত্ব। তাই গল্পগুলো পঠনে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া অনেক অনুভূতির ছোঁয়া পাবেন বলে আমার বিশ^াস। এই বইয়ের গল্পগুলো আমাদের জীবনের চারপাশে ভেসে বেড়ানো খড়কুটো। আহতরা আঁকড়ে ধরে, আর বিজিতরা নতুনের কেতন ওড়ায়। আমি, আপনি, আমরা নিজের অবস্থানে কখনোই অনড় নই। জড়ই কেবল অনড়। আর জোয়াল এমন এক জড় পদার্থ, যাকে আপনি প্রাণ দিয়ে গতি সঞ্চার করেন। অনুভব করুন আপনার কাঁধের অদৃশ্য জোয়াল। ফরহাদ সাদেক