লিঙ্গ-বিভাজন একটি প্রাকৃতিক পরিস্থিতি। অথচ, একে সামাজিক এবং সামগ্রিক ক'রে তোলা হয়েছে। এবং এভাবেই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভেদরেখাকে ঢেকে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। যেমন, শ্রেণীবিভাজন; অর্থাৎ, অর্থনৈতিক বিভাজন সম্পর্কে আজকাল আর বলার প্রায়-কেউ নেই। বিত্তশালী শোষকদের দিক থেকে এ এক মহা মওকা! তারা, তাই, নারী পুরুষ বিভাজনের নারীবাদী প্রচারকে সারাক্ষণ প্রবল হাওয়া যোগাচ্ছেন। তথাকথিত 'সমাজতন্ত্রী নারীবাদী'রাও বুঝি খুশি হয়ে এ পরিস্থিতি দেখছেন! বর্ণ-বিভাজনের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। সাদা-কালো বিভাজনের কথা বলছি। ভারত উপমহাদেশের বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সত্য। তাই, আমরা মনে করি এ এক মহা উদ্বেগজনক অবস্থা। এ নিয়ে কথা বলা, কণ্ঠ তোলা অত্যন্ত জরুরি। বলতে হবে সকল রকম বৈষম্য এবং ভেদের বিরুদ্ধে। তা সে যে-ই ঘটাক। পুরুষ। নারী। সাদা। কালো। ব্রাহ্মণ-কায়েত। 'মৌ-লোভী' মৌলবি। পাদ্রিজন। লক্ষ করতে এবং প্রতিবাদ জানাতে হবে যাবতীয় ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কারণ, এ তো আর সম্ভব নয় যে শুধু সকল মানুষই শুধু নয়, সকল প্রাণী, এমনকি উদ্ভিদের মধ্যে- অপ্রাণীদের মধ্যে নেই দমন এবং দাপটের যাবতীয় বৃত্তি, প্রবৃত্তি এবং প্রবণতা। ঠুলিহীন চোখে তাকালেই এই বিশ্বপরিস্থিতিটা স্পষ্ট নজরে আসবে। আর, কেবল 'সব দোষ অন্য ঘোষ' তো কোনো কথাই হতে পারে না। বিশেষত, আত্মজ্ঞান- এবং আত্মসমালোচনা বর্জিতভাবে বলা বা লেখা কি ক'রে দীর্ঘকাল চলতে পারে একটি গোটা লিঙ্গের বিপুল সংখ্যক সদস্যের তরফে? নারী বুদ্ধিজীবিরা কি ক'রে প্রায় সম্পূর্ণ আত্মসমালোচনা-বর্জিতভাবে চলে গেলেন, যাচ্ছেন? এমন সব প্রশ্ন এবং বিবেচনা থেকেই আমরা অত্যন্ত ব্যতিক্রম মনে করেছি নাইজেরিয়ার সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী শেওয়েজুর লেখা Anatomy of Female Power বইটিকে। দ্রুত অনুবাদে এটি আমরা বাংলা ভাষার পাঠকদের সামনে হাজির করছি। এবারের বইমেলার সময় পরিধিতে প্রকাশ করার জন্য আমরা এর তথ্য/ সূত্র-নির্দেশনা পথও ইংরেজিতেই রেখে দিয়েছি। আরও কিছু ত্রুটি- অপূর্ণতা থেকে গিয়েছে (দ্বিতীয় সংস্করণেই আমরা এসব দূর করতে পারবো আশা করছি)। এর জন্য আগাম মার্জনা চেয়ে প্রকাশ করছি আমরা এই বই।