সততা, পরিশ্রম, কর্মনিষ্ঠা বলে একজন মানুষ সমাজের কতটা উপরে উঠে যেতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ রামদুলাল দে। জন্মেছিলেন পশ্চিম বঙ্গের দমদমের কাছে রেকজানি গ্রামে১৭৫২ সালে, মাত্র ৫ বছর বয়সেই মাতৃ- পিতৃহারা, অতঃপর নানার বাড়িতে আশ্রিত হতে হয়, তাঁরাও ছিলেন চরম দরিদ্র, নানা করতেন ভিক্ষাবৃত্তি, আর নানি তৎকালীন কোলকাতার অন্যতম নামকরা ব্যাবসায়ী মদনমোহন দত্তের বাসায় পাচিকার কাজ।তাঁর নানি মদনমোহন দত্তের পরিবারের কৃপা লাভ করায় তারা সবাই মদনমোহন দত্তের বাসাতেই থাকতেন, ছোট থেকেই রামদুলাল ছিলেন মেধাবী অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অঙ্ক, হিসাবপত্র রাখা এবং টুকটাক ইংরেজিতে কথা বলতে শিখে গিয়েছিলেন। আর তারপর থেকে পরিশ্রম ও সততার বলে জীবনে উন্নতির শিখরে রামদুলাল কিভাবে পৌঁছে গিয়েছিলেন তারই কাহিনি আমাদের শুনিয়েছেন রামদুলাল দের আধুনিক জীবনীকার শ্রী মদনমোহন কুমার তাঁর "ভারত- মার্কিন বানিজ্যের পথিকৃৎ রামদুলাল দে " গ্রন্থে। রামদুলাল স্বাধীন ভাবে ব্যাবসা শুরু করে অল্প কয়েকবছরের মধ্যেই শীর্ষ বাঙ্গালি বনিক হয়ে যান, হয়েছিলেন ১২ টি জাহাজের মালিক। এসব জাহাজের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি সুতিবস্ত্র, চা, চিনি, সোরা, চট, রপ্তানি করতেন, মার্কিনীরা তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতেন, মার্কিন বণিকেরা জর্জ ওয়াশিংটনের জীবদ্দশায় একজন বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা অঙ্কিত তাঁর ( জর্জ ওয়াশিংটনের) একটি তৈলচিত্র রামদুলাল কে উপহার দিয়েছিলেন। ব্যাবসা থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে রামদুলাল, শিক্ষাদীক্ষা, নিজ ধর্ম প্রচার, অসহায় নিঃসম্বল মানুষের পাশে দারানো সহ প্রচুর জনহিতকর কাজ করতেন। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে রামদুলাল দের পরিবার কে "বাংলার রথ্সাইল্ড " বলে অভিহিত করা হতো। এমন কর্মবীর রামদুলাল দে ৭৩ বছর বয়সে ১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন।